খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৭:৩৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৮

খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী

‘খালেদা জিয়াকে তো আমি গ্রেপ্তার করিনি। এতিমের টাকা চুরি করায় তার সাজা হয়েছে। বিএনপির এত নামি-দামি ব্যারিস্টাররা কি করল? তারা কেন পারল না দলীয় নেত্রীকে মুক্ত করতে’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রবিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা জানান। এসময় তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি পেতে হলে হয় কোর্ট থেকে, না হয় রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

সরকারের কাছে দলীয় নেত্রীর মুক্তির দাবি করায় বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়াকে তো আমি গ্রেপ্তার করিনি। এতিমের টাকা চুরি করায় তার সাজা হয়েছে। বিএনপির এত নামি-দামি ব্যারিস্টাররা কি করল? তারা কেন পারল না দলীয় নেত্রীকে মুক্ত করতে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রীকে তো রাজনৈতিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়নি। সে গ্রেপ্তার হয়েছে এতিমের টাকা চুরি করে। কেস তো আরো আছে। তাদের আমলে আন্তর্জাতিকভাবে এমন অনেক ঘটনা আছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তারা (বিএনপি) যেটা চাচ্ছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি- এটা তো কোর্টের মাধ্যমে আনতে হবে। আর দ্রুত চাইলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবে। এটাই আমাদের সিস্টেম। এই মামলায় আমাদের ওপর দোষ দিয়ে তো কোনো লাভ নেই।

তিনি আরো বলেন, বিএনপির এত নামি-দামি ব্যারিস্টার, তারা কেন পারলো না যে খালেদা জিয়া নির্দোষ। এখানে আমাদের কী দোষ? এখন বলছে নির্বাচন করবে না। নির্বাচন করবে কি করবে না, এটা একটা দলের বিষয়। এখানে কাউকে দাওয়াত দেয়া না দেয়া আমাদের বিষয় না।

নির্বাচনের আগে বিরোধী দলগুলো সঙ্গে সংলাপে বসার কোনো সম্ভাবনা আছে কি-না জানতে চাইরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের (বিএনপি) সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলাম। ফোনও করেছিলাম, আপনারা জানেন, তিনি ধরেননি (খালেদা জিয়া)।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ছেলে (আরাফাত রহমান কোকো) যখন মারা গেলো, তখন গেলাম, মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিলো। এই অপমান, এটা তো মেনে নেওয়া যায় না। এখন যে যা-ই বলুন, তাদের সঙ্গে আমি অন্তত বসবো না।

তিনি বলেন, যেদিন বিএনপি আমার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল- সেই দিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাদের সাথে কোনো আলোচনা হবে না। তাই বিএনপির সাথে কোনো আলোচনা হবে না।

তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি আসবে না তা তাদের ব্যাপার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের সাথে জিয়া জড়িত।’

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির জন্মই কারচুপি করে। তাই ইভিএম চালু হলে ভোট কারচুপি করতে পারবে না বলেই বিএনপি এর বিরুদ্ধে বলছে।

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ভুয়া ছবি দিয়ে মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনীর প্রোপাগান্ডামূলক একটি বই প্রকাশের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা এভাবে ভুয়া ছবি দিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে জঘন্য কাজ করেছে। কিন্তু এটা তারা কার কাছ থেকে শিখলো? আমাদের দেশেও তো হয়েছে। একেবারে কাবা ঘরের সামনে ব্যানার ধরার ছবির মিথ্যাচারও আমরা দেখেছি। সুতরাং এসব মানুষের কাছে ধরা পড়ে যায়। মিয়ানমার সরকারও ধরা পড়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান প্রশংসা করেছেন।’

বিকাল ৪টায় গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে জন্মষ্টমীর শুভেচ্ছা জানান এবং এরপর নেপালে বিমসটেক সম্মেলন নিয়ে তার বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন। সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন গণভবন থেকে এই সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচার করেছে।

শেখ হাসিনা নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে বঙ্গোপসাগরীয় উপকূলের দেশগুলোর জোট বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশনের (বিমসটেক) চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন।

বিমসটেক সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে শেখ হাসিনা মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল সৃষ্টি, বিনিয়োগ ও জ্বালানি খাতে যৌথ প্রচেষ্টা, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ এবং অর্থায়ন প্রক্রিয়া গড়ে তোলার মাধ্যমে বিমসটেক ফোরামে সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির সঙ্গে বৈঠক করেন। সামিট অব দ্য বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক)- এর চতুর্থ সম্মেলনে যোগ দিতে গত ৩০ আগস্ট দুই দিনের সফরে নেপাল যান প্রধানমন্ত্রী। এরপর শনিবার তিনি দেশে ফেরেন।

সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটা সরকার থেকে আরেকটা সরকারে যেতে যেন কোনো ফাঁক-ফোকর না থাকে। মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে গেলে সংসদ ভেঙে দিতে হয়।

সংসদ কিন্তু কখনো শেষ হয়ে যায়নি। যদি কোনো ইমার্জেন্সি দেখা দেয়, যদি কোনো যুদ্ধ দেখা দেয় তখন ওই পার্লামেন্টের অনুমোদন নিয়েই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হবে।