রাজশাহীতে লিটন জয়ী, সিলেটে আরিফ ও বরিশালে সাদিক এগিয়ে

প্রকাশিত: ১১:৫২ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩০, ২০১৮

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছেন। মোট ১৩৮ কেন্দ্রের কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফলে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন পেয়েছেন ১৬৬৩৯৪ ভোট। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭৮৪৯২ ভোট। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন; যার মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন ও নারী ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন। তবে পুরুষের চেয়ে এখানে নারী ভোটার বেশি।

এদিকে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সর্বশেষ বেসরকারী প্রাপ্ত ফলাফলে ৩ হাজার ২৪৬ ভোটে এগিয়ে আছেন বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। ১২৩টি কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফলে কামরান পেয়েছেন ৮০ হাজার ৪০৩ ভোট এবং আরিফ পেয়েছেন ৮৩ হাজার ৬৪৯ ভোট। সোমবার রাত ১১টায় নির্বাচন কমিশন ঘোষিত বেসরকারি ফলাফলে এ তথ্য জানা যায়। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, সিলেট সিটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন।

এছাড়া বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আওয়ামী লীগের সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ নৌকা প্রতীক নিয়ে এগিয়ে আছেন। মোট ১২৩ কেন্দ্রের মধ্যে ৯৯টি কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফলে আওয়ামী লীগের সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ পেয়েছেন ৯৫৪৪০ ভোট। অন্যদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. মজিবর রহমান সরোয়ার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১২৭৬৭ ভোট। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, বরিশাল সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন; যার মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন ও নারী ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন। তবে এ সিটিতে পুরুষ ভোটার বেশি।

সোমবার সকাল ৮ থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের কারচুপি, কেন্দ্র দখল, জাল ভোট, প্রভাব বিস্তার ও ভোটদানে বাধা দেয়ার অভিযোগ তুলে বরিশাল সিটি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, বাসদ ও সিপিবি’র মেয়র প্রার্থীরা।

বিবিসি’র সংবাদদাতার চোখে রাজশাহীর সিটি নির্বাচন
আমি ভোট শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই বের হয়েছিলাম। একটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখি, সাড়ে ৬টা থেকে অনেকে কেন্দ্রের লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাদের গলায় মেয়র প্রার্থীর স্টিকার লাগানো। তারা আমাকে জানালো, ভোর ৬টা থেকে তারা লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কারণ তাদের ওপর নির্দেশ ছিল যেন যত তাড়াতাড়ি কর্মীদের কেন্দ্র নিয়ে আসা হয়। এরপর আমি আরো কয়েকটি কেন্দ্রে গিয়েছি।

তিনটা সেন্টার ঘুরে একটি সেন্টারে বিএনপির কোন এজেন্ট পাইনি। রাস্তাঘাটে অনেক নারী পুরুষের সমাবেশ রয়েছে, কিন্তু তাদের বেশিরভাগই নৌকার ব্যাজ বা কোট পিন পড়ে রয়েছেন। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ধানের শীষের পক্ষে একটিও প্রচারণার চিত্র দেখতে পাইনি। এমনকি কোন কেন্দ্রের বাইরেও নেতাকর্মীদের চোখে পড়েনি। শুধুমাত্র শহরের পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের খানিকটা দূরে বিএনপি নেতা মিজানুর রহমানকে বসে থাকতে দেখি।

তারা অভিযোগ করেন যে, তাদের এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। প্রিসাইডিং অফিসার জানান, দেরি করে আসায় তাদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তবে এজেন্টরা বলছেন , তারা ঠিক সময়েই এসেছেন, কিন্তু তাদের আইডি কার্ড দেয়া হয়নি। বিকালের দিকে ইসলামিয়া কলেজ সেন্টারে দেখি বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল অবস্থান নিয়ে রয়েছেন।

তিনি বলেছেন, সকাল থেকে আমি ৩০/৩৫টা কেন্দ্র ঘুরেছি, কিন্তু সব জায়গাতেই দেখতে পেয়েছি বিএনপির প্রার্থীরা ভোট দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। আমি নিজেও কেন্দ্রে ঢুকে জানতে পারি, সেখানে মেয়রের সব ব্যালট শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু তখনো অনেক মানুষ ভোট দেয়ার জন্য লাইনে দাড়িয়ে ছিলেন।

বিবিসি’র সংবাদদাতার চোখে সিলেট সিটি নির্বাচন
সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ শুরু হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন কেন্দ্রে গোলযোগের ঘটনা ঘটছে। নগরের ১৮নং ওয়ার্ডের ঝর্ণারপাড় এলাকার কাজী জালাল উদ্দিন বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দেওয়ার ঘটনায় ফাঁকা গুলি ছুড়েছে পুলিশ।

একই সময়ে নগরের মদিনা মার্কেট এলাকায় শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া মাদরাসা ভোট কেন্দ্রে জাল ভোট প্রদানকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত নেতাকর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আরো কয়েকটি কেন্দ্রে অনিয়ম, হামলা করে জাল ভোট বাক্সে ভরার অভিযোগ উঠেছে।

বেলা ১১টার দিকে নগরের মদিনা মার্কেট এলাকার শাহজালাল জামিয়া ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন বুথে কয়েকজন যুবক ব্যালট পেপারে সিল মারছে। এক পর্যায়ে সরকার দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীদের বাকবিতণ্ডা শুরু হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

পরে জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ এবং জামায়াত সমর্থিত নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১৫ মিনিট ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল। এ অবস্থায় কেন্দ্র অনেকটা ফাঁকা হয়ে পড়ে। জাল ভোট দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে কোন উত্তর দিতে চাননি প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।

এছাড়া সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ১৮ নং ওয়ার্ডের মডেল স্কুল কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এক যুবক। সমর্থকদের ধাওয়ায় সে ব্যালট নিয়ে যেতে পারেনি। এ কারণে ওই কেন্দ্রে আধঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে।

বিবিসি’র সংবাদদাতার চোখে বরিশাল সিটি নির্বাচন
সকালে ভোট শুরু হওয়ার পরপরই শহরের কেন্দ্রস্থলে অশ্বিনীকুমার হলে অনেক ভোটার ছিল। ভোট সুষ্ঠুভাবেই চলছিল এবং যথেষ্ট ভিড় ছিল। সেখানে আমরা যখন অবস্থান করছিলাম,দশ মিনিটের মধ্যেই খবর আসে, অন্যান্য কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়া হচ্ছে।

আবার অনেককে ঢুকতেও দেয়া হয়নি, এরকম অভিযোগ আসতে থাকে। সেখানে ধানের শীষের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ওবায়দুল হক অভিযোগ করেন, বেশ কয়েকটি কেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। আমরা জানতে পারি, শুরুর দিকে উদয়ন স্কুল কেন্দ্রের একটি বুথে পুলিশ গিয়ে জানতে চায়, এখানে ধানের শীষের এজেন্ট কে? সে নিজের পরিচয় দিলে পুলিশ তাকে বের করে দেয়।

সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেয়া হচ্ছে। সেখানে দেখা গেছে, ইভিএমে যখন কোন ভোটার তার বাটন পুশ করবেন, তখন সরকার দলীয় মেয়র ও কাউন্সিলরের কর্মীরা ভোটারদের বাটনে পুশ করতে না দিয়ে নিজেরাই বাটন চেপে ভোট দিচ্ছেন। প্রায় সব কেন্দ্রের বাইরে শুধুমাত্র সরকার দলীয় কর্মীদেরই দেখা গেছে। এমনকি কেন্দ্রের ভেতরেও শুধুমাত্র নৌকার ব্যাজ লাগানো কর্মীদেরই দেখা গেছে। দুই একটি কেন্দ্র ছাড়া সবগুলোতেই আওয়ামী লীগের মেয়র বা কাউন্সিলরের কর্মীদেরই দেখা গেছে।

অনেক কেন্দ্রে বিরোধী পোলিং এজেন্টদের দেখা যায়নি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে প্রিসাইডিং অফিসার বা পুলিশ সাংবাদিকদের দেখে নৌকার ব্যাজ লাগানো কর্মীদের তাদের বের করে দিচ্ছেন। কিন্তু একটু পরেই তারা আবার কেন্দ্রে প্রবেশ করছেন। অম্লিত লাল দে মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রে ১১টার দিকে যখন আমরা যাই, তখন দেখা যায় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

অন্যরা তাকে শুশ্রূষা করছেন। আমরা যখন জানতে চাই, তখন তিনি বলেন, সরকার সমর্থিত সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী সব ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ভরেছেন। এ নিয়ে উত্তেজনায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সকাল বেলায় কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি দেখা গেলেও, পরে আর তা দেখা যায়নি।

এসব অনিয়মের অভিযোগ বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরওয়ার সোয়া ১২টার দিকে বরিশাল প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। এরপর তিনি লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ জানান। দেড়টার দিকে সেই অফিসেই লাঙ্গল মার্কার প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী ওবায়দুর রহমান মাহবুব এবং বাসদের মেয়র প্রার্থী ডা. মনীষা চক্রবর্তী রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিতভাবে নির্বাচন স্থগিতসহ বর্জনের কথা জানান।