বেগম খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেডে ভর্তির ব্যবস্থা করুন : রিজভী

প্রকাশিত: ২:০১ অপরাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০১৮

বেগম খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেডে ভর্তির ব্যবস্থা করুন : রিজভী

বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতির কথা জানিয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখনো গুরুতর অসুস্থ। তার জ্বর ও শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা কোনোভাবেই কমছে না।

রবিবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এম এ মান্নান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ।

এ সময় রিজভী বলেন, শনিবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও পরিবারের সদস্যরা কারাগারে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু তিনি এখনও গুরুতর অসুস্থ। তিনি দর্শনার্থীদের সঙ্গে নিচে নেমে কথা বলেন, কিন্তু এখন তিনি খুব বেশি অসুস্থতার কারণে দোতলা থেকে নিচে নামতেই পারছেন না। এখনও তিনি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। তার হাঁটা-চলা করতে কষ্ট হয়। অর্থাৎ তার শারীরিক সমস্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। কারাগারে অবর্ণনীয় কষ্টে রাখার জন্যই তার অসুস্থতা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রিজভী বলেন, বারবার ইউনাইটেড হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার দাবি জানানো হলেও সরকার ভ্রুক্ষেপহীন ও উদাসীন। যেন শারীরিকভাবে যন্ত্রণা দিতেই তাঁকে কারাগারের লাল দেয়ালের মধ্যে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। এটা যেন এক ভয়াবহ প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার লক্ষ্য নিয়েই পরিকল্পনা প্রণয়ন করে এখন তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশনেত্রীর ওপর সরকার প্রধানের এই প্রতিহিংসা এক অশুভ অপশাসনেরই বার্তা দেয়। আমরা আবারও দলের পক্ষ থেকে সরকারের এই নির্দয় আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার চিকিৎসার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রেস ব্রিফিংয়ে রিজভী বলেন, রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এ কে এম মতিউর রহমান মন্টুকে শনিবার গভীর রাতে তার রাজশাহীর বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও এখনও পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি স্বীকার করছে না। নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বারবার বিবেকহীন এই নিষ্ঠুর আচরণের পুনরাবৃত্তি বিএনপি এবং দেশের মানুষের মনে আরো গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কা চিরস্থায়ী রূপ নিয়েছে। আমি তাকে গ্রেপ্তার ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্বীকারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে তার অবস্থান নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গত দুই তিন দিনে জনসমর্থনহীন নৌকা মার্কার প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা খুলনা-গাজীপুরের সন্ত্রাসের আবহে নতুন মডেলের ভোট জালিয়াতির আসল রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে রাতদিন গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে ধানের শীষের আবেদন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। আওয়ামী চেতনায় সাজানো প্রশাসন নির্বাচনী এলাকাগুলোতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর ইউরোপে মধ্যযুগীয় ‘ডাইনী শিকার’ এর ন্যায় অভিযানে নেমেছে।

তিনি বলেন, খুলনা ও গাজীপুরের স্টাইল গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে ক্রমাগত হত্যা করার স্টাইল। সেই স্টাইল ৩০ জুলাই তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এখনও বলবৎ রয়েছে। ক্ষমতাসীন দল বেআইনিভাবে জয়ী হতে চাচ্ছে বলেই বেপরোয়া গ্রেপ্তার, গণগ্রেপ্তারসহ এক আতঙ্কজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, রাজশাহীতে যাদেরকে ধানের শীষের প্রার্থীর এজেন্ট মনোনীত করা হয়েছে, তাদের কারো নামেই মামলা নেই। অথচ গোয়েন্দা পুলিশ ধানের শীষের এজেন্টদেরকে নির্বিচারে আটক করে ১৫-২০ ঘণ্টা পর তাদের নামে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় অভিযুক্ত করে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। পুলিশী এই অনাচার এখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকাকে ভীতিকর বিরানভূমিতে পরিণত করে জনশূন্য পরিবেশ সৃষ্টি করা যাতে নৌকা মার্কায় সন্ত্রাসীরা একতরফা অবাধে সিল মারতে পারে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সিলেটে বিএনপির দুজন নেতাকর্মীকে পুলিশ কর্তৃক রাতে উঠিয়ে নেওয়ার পর সকালে অস্বীকার করে। সিলেটে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক নির্বাচনী প্রচারণা বাদ রেখে নিজের নেতাকর্মীদের বাঁচাতে এবং তাদের মুক্তির দাবিতে গতকালও পুলিশ কমিশনারের অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। বরিশালেও বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, তাদের বাড়িঘর ও নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর, হয়রানিসহ চলছে গ্রেপ্তারের হিড়িক। পুলিশী অভিযানে সারা বরিশালে শহরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা তাদের নিশ্চিত পরাজয় জেনে তিন সিটি করপোরেশন এলাকাতেই পুলিশকে দিয়ে এক আতঙ্কজনক পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে।

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে বিশ্বস্ততার সহিত দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছেন, কিন্তু খুলনা-গাজীপুরসহ চলমান সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে ঢালাও অনিয়ম ও অনাচারে সমগ্র নির্বাচনী ব্যবস্থা তছনছ হওয়ার পরেও তাদের নীরব দর্শকের ভূমিকা অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত ও অপ্রত্যাশিত। শুধু নীরব নয় বরং সরকারের অনুষঙ্গ হিসেবেও কাজ করছে তারা। ভোট সন্ত্রাসকে মহিমান্বিত করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ও কমিশনের বক্তব্য অভিন্ন। সরকারি দলের প্রার্থীকে জেতানের জন্য প্রশাসন ও দলীয় ক্যাডারদের দাপটে ভোটাররা আতঙ্কিত, অথচ এসব বিষয়ে নির্বাচনে কমিশনে (ইসি) হাজারো অভিযোগ দাখিল করলেও কখনও কোনো পদক্ষেপ কমিশনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি, মনে হয় তারা চমকপ্রদ ঘুমের বড়ি খেয়ে নিদ্রামগ্ন থাকেন। নির্বাচন নিয়ে এই কমিশন এখনও পর্যন্ত কোনো অগ্রগতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি, বরং বৃত্তপথেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। গণতন্ত্রের অপরিহার্য উপাদান নির্বাচন নিয়ে অন্ধকার ঘন থেকে ঘনতর হওয়ার মুহূর্তে বিবেকবান মানুষদের দায় থাকে, চাকরিজীবীদের দায় থাকে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতকালের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির এ নেতা বলেন, দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। কিন্তু তাঁর দুর্নীতির এ উন্নয়নের কথা কেন তিনি বলেননি সেটি আমরা জানি না। তবে এ জন্য কেন শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়নি সেটি আমাদের বুঝে আসে না। হয়তো খুব দ্রুত দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ায় শেখ হাসিনাকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশে উন্নয়ন হয়, আর বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে দেশে লুটপাট হয়, প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন রিজভী। বলেন, তিনি এত উন্নয়ন করেছেন। কিন্তু যখন রাস্তায় চলি তখন তো দেখি আগের সেই চিরচেনা যানজট, অসহায় মানুষ, দ্রব্যমূল্যের চড়া দাম। তাহলে উন্নয়নটা কোথায়? তবে দেশের মানুষের উন্নয়ন না হলেও সরকারি দলের উন্নয়ন ঠিকই হয়েছে।