হাতুরির আঘাতে পা ভাঙা তারেককে হঠাৎই রামেকের ছাড়পত্র

প্রকাশিত: ১২:২৫ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ৬, ২০১৮

হাতুরির আঘাতে পা ভাঙা তারেককে হঠাৎই রামেকের ছাড়পত্র

রাবি : সোমবার (২ জুলাই) ছাত্রলীগের হামলায় আহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবির) শিক্ষার্থী তারেককে সুস্থ হওয়ার আগেই ছাড়পত্র দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বৃহষ্পতিবার (৫ জুলাই) দুপুরে রামেক হাসপাতাল থেকে তাকে জোর করে ছাড়পত্র দেয়ার অভিযোগ করেছে তার পরিবার।

পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র পরিবারকে না দিয়ে পুলিশকে দিয়েছে। পুলিশ পরে তার (তারেকের) পরিবারের কাছে ছাড়পত্র হস্তান্তর করে। এখন তাদের চলে যেতে হবে।

হাসপাতালে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা বলেন, আমরা এ বিষয়ে কিছু জানি না। আমাদের ওপরের নির্দেশ। তাই সে অনুযায়ী কাজ করতে হচ্ছে।

এদিকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়ায় চিকিৎসা নিয়ে হতাশ তারেকের পরিবার। তার বোন ফাহেমা খাতুন জানান, তারেক প্রচুর অসুস্থ। তার সারা শরীরে এখনো ব্যথা রয়েছে। চলাফেরা দূরে থাক, তিন চার জন ধরা ছাড়া তার নড়াচড়া করার সাধ্যও নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেই তাকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।

রামেক হাসপাতালে তারেকের সকল চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করছিল তার সহপাঠীর। আহত তারেককে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়ায় এখন নগরীর রয়েল হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। সেখানে দুই দিন চিকিৎসার পর আবারও রামেকে ভর্তি করা হবে।

উল্লেখ্য, তরিকুল ইসলাম তারেক কোটা সংস্কার আন্দোলনের রাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তার বাসা গাইবান্ধা জেলা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায়।

গত সোমবার (২ জুলাই) কোটা আন্দোলনে পতাকা নিয়ে বিকেল ৪টার দিকে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের দিকে স্থানীয় বিনোদপুরের দিক থেকে মিছিল নিয়ে আসে আন্দোলনকারীরা। এর আগেই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা প্রধান ফটকের সামনে পতাকা মিছিল করবে এই খবর পেয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রধান ফটকে অবস্থান নেয়। এসময় তাদের হাতে লাঠি, জিআই পাইপ, হাতুড়ি, রড ইত্যাদি দেখা যায়। সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশও দাঁড়িয়েছিল।

জাতীয় পতাকা হাতে কোটা আন্দোলনকারীরা গেটের কাছে আসতেই তাদের ধাওয়া করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় পুলিশও ছাত্রলীগের পেছনে দৌঁড়াতে থাকে। কিন্তু পুলিশের উপস্থিতিতেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তারেককে রাস্তায় ফেলে মারধর করে। এসময় তাকে লাঠি, রড, হাতুরি দিয়ে এলোপাথারি মারধর করতে থাকে ছাত্রলীগ নেতারা। এসময় হাতুরির আঘাতে তার এক পায়ের হাড় সম্পূর্ণ ভেঙে যায়। ছাত্রলীগের ওই দিনের হামলায় কোটা আন্দোলনকারী রাবি শাখার আহবায়ক মাসুদ মোন্নাফসহ অন্তত ১১ জন আহত হন।

এঘটনার পরই তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সোমবার রাতে তার মাথায় সিটি স্ক্যান করা হয়। সিটি স্ক্যান রিপোর্ট অনুযায়ী তারেকের মাথায় প্রচণ্ড আঘাত লেগেছে। সারা শরীরে প্রচুর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করায় তার পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। আপাতত প্লাস্টার করে রাখা হয়েছে। তবে অস্ত্রোপচার না করলে তার পা স্বাভাবিক হবে না।