খালেদা জিয়ার ব্রিটিশ আইনজীবী দিল্লি যাচ্ছেন কেন?

প্রকাশিত: ১০:৫৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ২, ২০১৮

খালেদা জিয়ার ব্রিটিশ আইনজীবী দিল্লি যাচ্ছেন কেন?

বাংলাদেশে বিরোধী দল বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পক্ষে নিযুক্ত ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড কার্লাইল দিল্লিতে গিয়ে তার হয়ে সওয়াল করতে চলেছেন।

ব্রিটেনে হাউস অব লর্ডসের ওই প্রবীণ সদস্য সোমবার জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকার তার ভিসার আবেদন ঝুলিয়ে রেখেছে বলেই তিনি বাধ্য হয়ে দিল্লিতে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছেন। খবর বিবিসি’র

কেন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ‘ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ’, সেটাই তিনি দিল্লিতে গিয়ে ব্যাখ্যা করবেন বলে লর্ড কার্লাইল জানিয়েছেন।

আগামী ১৩ জুলাই দুপুরে দিল্লির ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাবে ঐ সংবাদ সম্মেলনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

লর্ড কার্লাইল বলেন, ‘আমি বেগম জিয়ার কৌঁসুলিদের টিমের একজন – আর এই সম্মেলনটি আমি ঢাকাতেই করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার আমাকে ভিসা দেওয়া না-দেওয়ার প্রশ্নে ইচ্ছাকৃতভাবে আগে থেকেই বাধা সৃষ্টি করছে। তারা এখনও আমার ভিসা প্রত্যাখ্যান করেনি ঠিকই, কিন্তু আমার হাতে বাংলাদেশের ভিসা নেই। ফলে আমি ঢাকায় এই অনুষ্ঠানটি করতে পারছি না, বদলে দিল্লিতেই সেটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

ঢাকা থেকে যাবেন বিএনপি নেতারাও
লর্ড কার্লাইল বলেন দিল্লিতে গিয়ে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের সামনে কার্লাইল যে বার্তাটি দিতে চান তা হলো – খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখার চেষ্টা চলছে।

সেখানে ঢাকা থেকে এসে বিএনপির সিনিয়র কিছু নেতা খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবীরাও লর্ড কার্লাইলের সঙ্গে যোগ দেবেন বলে স্থির হয়েছে।

লর্ড কার্লাইল বলেন, ‘দিল্লির ওই অনুষ্ঠানে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব না-থাকলে আমি অবাকই হব। তবে আমি স্পষ্ট করে দিতে চাই, আমি কোনও রাজনৈতিক প্রচারনায় সামিল হতে দিল্লিতে যাচ্ছি না। একজন সিনিয়র ব্রিটিশ আইনজীবী হিসেবে আমাকে এই মামলায় আমার মক্কেলের পক্ষে নিয়োজিত করা হয়েছে, সে কারণেই আমি এটা করছি। আর আমি বিশ্বাস করি, শুধুমাত্র রাজনীতির কারণেই এই মামলাটি রুজু করা হয়েছে।’

ব্রিটিশ এই আইনজীবী গত প্রায় দুদশক ধরে হাউস অব লর্ডসের সদস্য, তার আগেও আরও প্রায় পনেরো বছর তিনি হাউস অব কমন্সেরও সদস্য ছিলেন। তিনি দাবি করছেন, রাজনীতি ও আইনের জগতে এত দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার সুবাদে তিনি নিশ্চিত যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি সম্পূর্ণ সাজানো।

‘বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পেশ করা সাক্ষ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে আমি বুঝেছি যে সেগুলো আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। তা থেকে আদৌ প্রমাণ করা যায় না তিনি কোনও ধরনের জালিয়াতি করছেন। কেন, সেটাই আমি দিল্লিতে গণমাধ্যমের কাছে ব্যাখ্যা করব। আর দ্বিতীয়ত, এ থেকেই বোঝা যায় এই মামলা আনার পেছনে সম্পূর্ণ অন্য উদ্দেশ্য আছে।’

বিএনপির কাছে ভারতের গুরুত্ব বাড়ছে
তাহলে কি তিনি বলতে চাইছেন, খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হতে হচ্ছে?

লর্ড কার্লাইলের জবাব, ‘আমি প্রতিহিংসা শব্দটা ব্যবহার করতে চাই না – তবে এটুকু বলব খালেদা জিয়াকে সে দেশের আসন্ন নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে অবশ্যই একটা তীব্র রাজনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে। কোনও প্রমাণ ছাড়াই ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত করে প্রায় মধ্য-সত্তরের একজন মহিলাকে যেভাবে বন্দী করে রাখা হয়েছে – সেটা তাকে রাস্তা থেকে সরাতে হয়তো সফল হতে পারে, কিন্তু অপরাধ হিসেবে অমার্জনীয়।’

গত মাসেই দিল্লিতে এসে ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও থিঙ্কট্যাঙ্কের সঙ্গে মতবিনিময় করেছিল বিএনপি-র একটি তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল। ভারত সম্পর্কে বিএনপি তাদের মনোভাব বদলাতে চাইছে, সেই সফরকে তারই বার্তা হিসেবে দেখা হয়েছিল।

তার পরের মাসেই খালেদা জিয়ার হয়ে সওয়াল করতে লর্ড কার্লাইলকে দিল্লিতে হাজির করে বিএনপি সম্ভবত আরও একবার বুঝিয়ে দিচ্ছে – নির্বাচনের এই বছরে তাদের কাছে ভারতের গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে।