স্পেন-রাশিয়া, ক্রোয়েশিয়া-ডেনমার্ক লড়াই আজ, সতর্ক অবস্থানে সবাই

প্রকাশিত: ১:৩৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ১, ২০১৮

স্পেন-রাশিয়া, ক্রোয়েশিয়া-ডেনমার্ক লড়াই আজ, সতর্ক অবস্থানে সবাই

মস্কো: স্বাগতিক রাশিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে ২০১০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ম্যাচটি মাঠে গড়াবে আজ রাত ৮টায়। ফেবারিট হলেও স্বাগতিক রাশিয়াকে সমীহ করছেন ইস্কো-রামোসরা।

অন্যদিকে রাত ১২টায় ডেনমার্কের মুখোমুখি হবে ক্রোয়েশিয়া। নিজনি নভগোরোদের এই ম্যাচে ফেবারিট ক্রোয়েটরাই। ‘ডি’ গ্রুপে আর্জেন্টিনার মতো পরাশক্তিকে উড়িয়ে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় মডরিচ, রাকিটিচদের দল। এই দুই ম্যাচের জয়ী দল পৌঁছে যাবে কোয়ার্টার ফাইনালে। আর বিদায় নিতে হবে দু’টি দলকে।

গ্রুপপর্বে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে দাপুটে জয় তুলে নেয় স্বাগতিক রাশিয়া। কিন্তু শেষ ম্যাচে উরুগুয়ের কাছে ৩-০ গোলে হেরে হতাশ হতে হয়। সঙ্গত কারণে তারকাসমৃদ্ধ স্পেনের বিরুদ্ধে রাশানদের ম্যাচটি আরও কঠিন হতে চলেছে। রাশিয়ান ফরোয়ার্ড আরটেম ডিজুবা তেমনই মনে করছেন।

ম্যাচের আগে ডিজুবা বলেন, গত ৩২ বছরে প্রথমবারের মতো আমরা নকআউট পর্বে খেলতে যাচ্ছি। দেখা যাক সেখানে কি করতে পারি। মনে হচ্ছে বক্সিংয়ের হেভিওয়েট কোন বিশ্ব লড়াই হতে যাচ্ছে। যেখানে অভিজ্ঞ একজন ফাইটার তরুণ কিন্তু সাহসী এক যোদ্ধার সঙ্গে রিংয়ে নামছে। দেখা যাক সেই লড়াইয়ে কে সেরা হয়। একটি ভাল দিনে যে কোন দল যে কাউকেই হারাতে পারে।

স্পেনের অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে, সার্জিও রামোসদের কঠিন রক্ষণব্যুহ ভেঙ্গে ডিজুবাকে সামনে এগোতে হবে। বিষয়টি নিয়ে তিনি নিজেও বেশ উচ্ছ্বসিত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেরাদের বিপক্ষে খেলতে গেলে নিজে কতটা ভাল সেটা প্রমাণ করা যায়। রামোস ও পিকের বিপক্ষে খেলাটা আমি বেশ উপভোগ করছি। এই ধরনের সুযোগ জীবনে একবারই আসে। দেখা যাক এই লড়াইয়ে কে বিজয়ী হয়।

গ্রুপপর্বে স্পেনের পারফর্মেন্স ততটা নজর কাড়তে পারেনি। ডিজুবা তাই মনে করেন নকআউট পর্বেও স্পেন তাদের জন্য ততটা ভয়ঙ্কর কিছু করতে পারবে না। এ বিষয়ে তিনি বলেন, তারা অবশ্যই বিশ্বের সেরা দলগুলোর একটি। গ্রুপপর্বের ভুলগুলো হয়তো তারা এখানে করবে না। আমরা জানি স্পেনের বিপক্ষে আমাদের কি করতে হবে। অবশ্যই তারা সুস্পষ্ট ফেবারিট। আমরা জানি ম্যাচটা মোটেই সহজ হবে না। উরুগুয়ে আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছে।

টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে সৌদি আরবকে পাঁচ গোলের লজ্জায় ডুবিয়েছিল রাশিয়া। সেই ম্যাচটির পর আবারও লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ফিরে এসেছে স্বাগতিকরা। স্প্যানিশ মিডফিল্ডার মার্কো এ্যাসেনসিও মনে করেন রাশিয়ান রাজধানীর ম্যাচটি উত্তেজনা ছাড়াবে। রিয়াল মাদ্রিদ তারকা বলেন, রাশিয়া তাদের সমর্থকদের উচ্ছ্বাসকে সঙ্গী করে মাঠে নামবে। ফাইনালের আদলেই আমাদের এই ম্যাচটিতে মুখোমুখি হতে হবে। জয়ী না হলে বাড়ির পথ ধরতে হবে। আমাদের কোচ হিয়েরো একজন জাত নেতা। সবাই এটা ইতোমধ্যেই উপলব্ধি করেছে। সে সবসময়ই আমাদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গার পর রাশিয়া এ পর্যন্ত কখনই স্পেনকে হারাতে পারেনি।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের নবেম্বরে দু’দলের প্রীতি ম্যাচটি ৩-৩ গোলে ড্র হয়েছিল। স্পেন শেষ ২৩ ম্যাচে অপরাজিত আছে। ২০১৮ বিশ্বকাপের ৩২টি দেশের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। দুই বছর আগে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে ইতালির কাছে সর্বশেষ হেরেছিল স্প্যানিশরা।

এবারের বিশ্বকাপে মাত্র দ্বিতীয় দল হিসেবে শতভাগ জয় নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে ক্রোয়েশিয়া। ডেনমার্কের বিরুদ্ধে তাই স্পষ্ট ফেবারিট হিসেবে মাঠে নামছে তারা। তবে ডেনিশরাও সুযোগ কাজে লাগাতে মুখিয়ে আছে। নিজনি নভগোরোদের এই স্টেডিয়ামেই গ্রুপপর্বে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল ক্রোয়েশিয়া। ডেনিশদের হারাতে পারলে কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হবে স্পেন ও রাশিয়ার মধ্যকার বিজয়ী দল।

১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল পর্যন্ত খেলেছিল ক্রোয়েটরা। বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত সেরা পারফর্মেন্সকে তাই এবার টপকে যেতে চায় লুকা মডরিচের দল। দলটির সোনালী প্রজন্মের ফুটবলাররা সে স্বপ্নই বুনছে।

২০ বছর আগের সেই মধুর স্মৃতি স্মরণ করে ক্রোয়েট ডিফেন্ডার ডেজান লোভরেন বলেন, তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ৯ বছর। আমার মনে আছে ক্রোয়েশিয়া যখন গোল দিয়েছিল তখন বাড়িতে আমার মা কি করেছিল। এবার আমাদের সামনে সুযোগ আছে সেই ফলকেও টপকে যাওয়ার, তবে সে জন্য ভাগ্যের প্রয়োজন। পরের রাউন্ডে আমাদের প্রতিপক্ষ বেশ কঠিন, ম্যাচগুলো আসলেই কঠিন হবে। ফেবারিট হলেও ডেনিশদের বেশ সমীহ করছে ক্রোয়েটরা।

দলটির তারকা মিডফিল্ডার ইভান রাকিটিচ মনে করেন তাদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন শেষ করে দেয়ার সামর্থ্য আছে ডেনমার্কের। দলটির বেশ কয়েকজন দুর্দান্ত ফুটবলার আছেন। বিশেষ করে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন। বার্সিলোনা তারকা তাই সতীর্থদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ডেনমার্ক বেশ সংঘবদ্ধ দল। তারা জানে প্রতিপক্ষকে কিভাবে থামিয়ে দিতে হবে। প্রতিপক্ষকে তারা খুব কমই গোলের সুযোগ দিয়েছে।

আক্রমণভাগেও তারা বেশ বিপজ্জনক দল। তাদের দলে আছে এরিকসেন। এই মুহূর্তে ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যতম সেরা প্লেমেকার সে। আমরা যদি প্রতি বছর বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেতাম তবে খেলোয়াড়রা মানসিকভাবেও শক্ত থাকতো। এটা এমনই একটা আসর যে এখানে সবকিছুই সম্ভব।

এবারসহ ষষ্ঠবারের মতো ক্রোয়েশিয়া ও ডেনমার্ক একে অপরের মুখোমুখি হচ্ছে। তাদের হেড টু হেড রেকর্ড সমান। দুটি করে জয় ও একটিতে ড্র। এর আগে বড় কোন টুর্নামেন্টে একবারই দল দু’টি মুখোমুখি হয়েছিল। ১৯৯৬ সালের ইউরোতে গ্রুপপর্বে ক্রোয়েশিয়া জিতেছিল ৩-০ গোলে। এই হিসেবেও এগিয়ে থাকছে ক্রোয়েটরা।