প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২:০৬ পূর্বাহ্ণ, মে ২৪, ২০১৮

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়ন করতে হলে যুব সমাজকে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি তিন হাজারের অধিক মাদক ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।’

বুধবার দুপুরে র‌্যাব-৬ সদর দফতরে বনদস্যু ও জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনার নির্দেশে সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, মাদকমুক্ত দেশ গড়তে আইন-শৃংখলা বাহিনীতে ঢেলে সাজানো হচ্ছে, খুব দ্রুত সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা দেশকে মাদকমুক্ত করবোই। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশকে জঙ্গি, মাদক ও জলদস্যু-বনদস্যুমুক্ত করতে হবে। আর এ প্রত্যয়ে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিটি ইউনিট কঠোর অবস্থান নিয়ে কাজ করছে। অতি শিগগিরই সুন্দরবনকে জলদস্যু ও বনদস্যু মুক্ত ঘোষণা করা হবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অপার সম্ভাবনাময় সুন্দরবন। কি নেই এ বনে। সৌন্দর্য্যের এই লীলা ভূমিতে বনদস্যু-জলদস্যুরা অবস্থান নিয়েছিল। র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় ছয়টি বনদস্যু বাহিনী ভুল বুঝতে পেরে আজ আত্মসমর্পণ করল।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের সব সময় বলেন- আমরা যদি তাৎক্ষণিক তাদের শাস্তি দেই তাহলে তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবে না। আমরা তাদেরকে সংশোধন হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি। তারা সুযোগের সদ্ব্যবহার করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শুধু ঘোষণায় দেননি, নির্দেশনাও দিয়েছেন তারা যেভাবেই হোক, ভুল বুঝে হোক, অভাবের তাড়নায় হোক বা যে কোন অবস্থার কারণে হোক অথবা দস্যুগীরির কারণেই হোক, তারা ভুল পথে গেছে। এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায় তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য তিনি প্রত্যেকের জন্য এক লাখ টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আজকে শত শত জলদস্যু স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে।’

দেশে উন্নত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে চার লাখ বিদেশি চাকরি করছেন। এটা একথাই প্রমাণ করে যে আমাদের দেশ উন্নয়নের পথে ধাবিত হচ্ছে। সে কারণেই বিদেশিরা এদেশে আসছে। আবার আমাদের দেশের বহু লোকও বিদেশে যাচ্ছে।

তিনি পুলিশের কর্মকাণ্ডের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আজকের পুলিশ আর দশ বছর আগের পুলিশ এক নয়। আজকের পুলিশ নিজের জীবন বিপন্ন করেও কাজ করছে। তারা জঙ্গি দমনে জীবন দিয়েছে। তারা দস্যু দমনে নিজের জীবন বিপন্ন করে জঙ্গলেও কাজ করছে। বঙ্গবন্ধু যে পুলিশের স্বপ্ন দেখতেন, এখনকার পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দেশের নিরাপত্তায় সেই ধরনের কাজ করছে।

মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খাদ্য ভেজালমুক্ত করতে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ইতোপূর্বে যেভাবে অভিযান পরিচালনা করেছে, মাদকের বিরুদ্ধেও সেভাবে অভিযান চালানো হবে। র‌্যাবসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের কাছে তালিকা দিয়েছে কারা মাদক ব্যবসা করে, কারা এর সঙ্গে জড়িত আর কারা এগুলো বহন করে। আমরা সেই তালিকা অনুযায়ী বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের ধরার চেষ্টা করছি।

ক্রসফায়ার সম্পর্কে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পুলিশ কাউকেই ক্রস ফায়ার দেয় না। যারা শুধু চ্যালেঞ্জ করে তারাই ক্রসফায়ারের শিকার হচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আগে কখনই গুলি করে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি না হয়। জীবন রক্ষার্থেই তারা শুধু গুলি চালায়। এতে শুধু সন্ত্রাসী, বনদস্যু, মাদক ব্যবসায়ীরাই নিহত হচ্ছে না, তাদের গুলিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও আহত হচ্ছে।

দীর্ঘদিনের দস্যুতার জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক ও সুন্দর জীবনের প্রত্যয় নিয়ে খুলনার লবণচরাস্থ র‌্যাব-৬ কার্যালয়ে দুপুরে সুন্দরবনের ছয় কুখ্যাত জলদস্যু-বনদস্যু বাহিনীর ৫৭ সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।

এরা হলেন- র‌্যাব-৬ এর আওতাধীন দাদা ভাই বাহিনীর ১৫ জন, হান্নান বাহিনীর ৯ জন এবং আমির আলী বাহিনীর ৭ জন। অপরদিকে র‌্যাব-৮ এর আওতাধীন সূর্য বাহিনীর ১০ জন, ছোট সামসু বাহিনীর ৯ জন এবং মুন্না বাহিনীর ৭ জন।

এসময় পূর্বে র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণকারী সাবেক ৫৮ জন জলদস্যু ও বনদস্যুর প্রত্যেককে পুনর্বাসন জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত এক লাখ টাকা করে চেক প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নব নির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, নৌপুলিশের ডিআইজি শেখ মো. মারুফ হাসান, র‌্যাব-৮ এর অধিনায়ক আতিকা ইসলাম, খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. হাবিবুর রহমান এবং খুলনা জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন র‌্যাব-৬ এর পরিচালক খন্দকার রফিকুল ইসলাম। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, কেসিসির নব-নির্বাচিত মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক আওরঙ্গজেব চৌধুরী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ছয়জন সদস্য।