চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই : জয়

প্রকাশিত: ৩:৩৪ অপরাহ্ণ, মে ১১, ২০১৮

চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই : জয়

যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উৎক্ষেপণের কয়েক সেকেন্ড আগে স্থগিত করা হয় বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এর কার্যক্রম। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

উৎক্ষেপণের মোক্ষম সময়ের জন্য অপেক্ষা করা খুবই সাধারণ বিষয়, চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই বলে তিনি জানিয়েছেন ওই পোস্টে।

শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিট থেকে পরবর্তী দুই ঘণ্টার মধ্যে উৎক্ষেপণের নতুন সময় নির্ধারণ করেছে মার্কিন বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্স।

সজীব ওয়াজেদ জয় তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন- ‘উৎক্ষেপণের শেষ মুহূর্তগুলো কম্পিউটার দ্বারা সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। হিসেবে যদি একটুও এদিক-সেদিক পাওয়া যায়, তা হলে কম্পিউটার উৎক্ষেপণ থেকে বিরত থাকে। আজ যেমন নির্ধারিত সময়ের ঠিক ৪২ সেকেন্ড আগে নিয়ন্ত্রণকারী কম্পিউটার উৎক্ষেপণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। স্পেসএক্স সব কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগামীকাল একই সময়ে আবারও আমাদের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বহনকারী রকেটটি উৎক্ষেপণের চেষ্টা চালাবে। যেহেতু এ ধরনের বিষয়ে কোনো ঝুঁকি নেয়া যায় না, সেহেতু উৎক্ষেপণের মোক্ষম সময়ের জন্য অপেক্ষা করা খুবই সাধারণ বিষয়, চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।’

এদিকে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘শেষ মিনিটে মাত্র ৪২ সেকেন্ড আগে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এটি সম্পূর্ণ স্পেসএক্স কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে, বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণের কোনো সুযোগ নেই। দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই কাল (শুক্রবার দিবাগত রাত) যেন ভালোভাবে উৎক্ষেপণ হয়।’

বাংলাদেশ সময় গত রাত ১টা ৩৭ মিনিটে দেশের প্রথম এ যোগাযোগ উপগ্রহ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে অরবিটাল স্লটের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরুর কথা ছিল। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে (স্ট্যান্ডার্ড গ্রাউন্ড সিস্টেম অটো অ্যাবোর্ট) শুক্রবার এটির উৎক্ষেপণ স্থগিত করা হয়।

স্পেসএক্স শুক্রবার এক টুইটার বার্তায় জানিয়েছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে (স্ট্যান্ডার্ড গ্রাউন্ড সিস্টেম অটো অ্যাবোর্ট) আজ (শুক্রবার) উপগ্রহটি উৎক্ষেপণ স্থল থেকে নামানো হয়েছে।

এই স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ প্রত্যক্ষ করতে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়।

স্পেসএক্স তাদের টুইটার বার্তায় জানায়, রকেট ও স্যাটেলাইট সম্পূর্ণ অক্ষত রয়েছে এবং এটি উৎক্ষেপণে নিয়োজিত দল যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বিকেল ৪ টা ১৪ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ১২ মে (শনিবার) রাত ২ টা ১৪ মিনিট) উপগ্রহটি আবারো উৎক্ষেপণে কাজ করে যাচ্ছে।

এরআগে স্পেসএক্স জাতির স্বপ্নের এই স্যাটেলাইট গত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বিকেল ৪ টা ১৪ মিনিটে এবং বাংলাদেশ সময় রাত ২ টা ১৪ মিনিটে উৎক্ষেপণের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।

স্পেসএক্স দেশের প্রথম জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটটি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে কক্ষপথে পাঠাতে আজ রাতে আবারো উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়া শুরু করবে।

স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটে করে কেপ ক্যানাভেরাল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে এ স্যাটেলাইটটি মহাকাশে যাত্রা করবে।
এ ঐতিহাসিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে বর্তমানে ফ্লোরিডায় অবস্থান করা আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টো সজিব ওয়াজেদের নেতৃত্বে প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে দেশে প্রথমবারের মতো স্যাটেলাইট আর্থ স্টেশন নির্মাণের মাধ্যমে মহাকাশ যুগে প্রবেশের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

দেশের সব বয়সের মানুষ সরাসরি সম্প্রচার করা এ উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠান দেখার জন্য মধ্য রাতের পরও জেগেছিল। শুধু তাই নয় বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীরাও সরাসরি সম্প্রচারিত এ উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠান গভীর আগ্রহের সঙ্গে প্রত্যক্ষ করতে জেগে ছিল।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে প্রেরণের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ যোগাযোগ উপগ্রহ উৎক্ষেপণকারী ৫৭তম দেশে পরিণত হবে।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান (বিটিআরসি) ড. শাহজাহান মাহমুদ এরআগে বলেন, ফ্যালকন-৯ রকেট ৩.৭ টন ওজনের স্যাটেলাইটটিকে উৎক্ষেপণ মঞ্চ থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে মহাকাশে নিয়ে যাবে।

দু’টি পর্যায়ে এ উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হবে। প্রথম পর্যায়ে লঞ্চ অ্যান্ড আর্লি অরবিট ফেজ (এলইওপি) এবং দ্বিতীয় পর্যায় হলো স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপন।

স্পেসএক্স এর আগে গত ১৬ ডিসেম্বর ফ্যালকন-৯ রকেটের মাধ্যমে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা নিয়েছিল। কিন্তু হ্যারিকেন ইরমার কারণে উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়।

সরকার ২০১৫ সালে ‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইট প্রকল্প গ্রহণ করে এবং এটি নির্মাণে একই বছরের নভেম্বরে ফ্রান্সের থ্যালাস অ্যালেনিয়া কোম্পানির সঙ্গে ২৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করে। স্যাটেলাইটের জন্য মোট ব্যয় ২,৯৬৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে এইচএসবিসি ঋণ হিসেবে ১,৫৮৫ কোটি টাকা সরবরাহ করছে।

ফরাসী কোম্পানী থ্যালাস অ্যালেনিয়া কয়েক মাস আগে এ স্যাটেলাইটের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে। এটিকে ফ্রান্সের কানে রাখা হয়। পরে গত ২৯ মার্চ এটিকে ফ্লোরিডায় স্থানান্তর করা হয়।

যদিও বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট বিদেশ থেকে ক্রয় করা হয়েছে এবং এটি উৎক্ষেপণও বিদেশ থেকেই করা হবে। তবে দেশ থেকেই এই স্যাটেলাইটটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। স্যাটেলাইটটি নিয়ন্ত্রণের জন্য ইতোমধ্যেই গাজীপুরের জয়দেবপুরে এবং রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় একটি করে নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু-১ এর ফলে ডাইরেক্ট-টু-হো (ডিটিএইচ) ভিডিও সার্ভিস, ই-লার্নিং, টেলি-মেডিসিন, পরিবার পরিকল্পনা, কৃষি খাতসহ দুর্যোগ উদ্ধারে ভয়েস সার্ভিসের জন্য সেলুলার নেটওয়ার্কের কার্যক্রম এবং এসসিএডিএ, এওএইচও-এর ডাটা সার্ভিসের পাশাপাশি বিজনেস-টু-বিজনেস (ভিসেট) পরিচালনায় আরো সহজতর করবে।

ডিটিএইচ সেবা বিশ্বব্যাপী টেলিভিশন বিনোদনের জগতে দ্রুত গতির সেবা দিয়ে থাকে এবং এখন বঙ্গবন্ধু-১ এর মাধ্যমে এই সেবা আরও সহজ ও দ্রুততর করবে। স্যাটেলাইট এর ফলে ভিডিও তথা সম্প্রচার সহজ করার পাশাপাশি অনুষ্ঠান কার্যক্রম ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক এবং ডিটিএইচের মাধ্যমে অনায়াসে বিতরণ করতে পারবে।

স্যাটেলাইটে নিজস্ব ভিস্যাট থাকবে যার মাধ্যমে ব্যাংক ও অন্যান্য কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভয়েস, ডাটা ও ইন্টারনেট সেবা নিতে পারবে।

বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তারা বলেন, দেশের প্রথম এ যোগাযোগ উপগ্রহটি প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকায় ইন্টারনেট ও টেলি যোগাযোগ সেবা সম্প্রসারণে সহায়তা করবে।