প্রযুক্তি আয়ত্তকরণের পাশাপাশি পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন জরুরি : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৩:৩৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৪, ২০১৮

প্রযুক্তি আয়ত্তকরণের পাশাপাশি পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন জরুরি : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিভিন্ন দেশের পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তি আয়ত্তকরণের পাশাপাশি পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি।

বুধবার (৪ এপ্রিল) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় এসএমই মেলা-২০১৮’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার ২০১৮’ বিজয়ী ও মেলায় অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তাদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে এসএমই’র গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের সুষম উন্নয়নের জন্য এসএমই খাতের বিকাশের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব। এসএমই সবচেয়ে শ্রমঘন ও স্বল্পপুঁজি নির্ভর খাত হওয়ায়, এই খাতের মাধ্যমে স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগে অধিক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।

দেশে প্রায় ৯০ শতাংশ শিল্পই ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের অন্তর্ভুক্ত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাই জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ। জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান প্রায় ২৫ শতাংশ।

‘দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত সুরক্ষার মাধ্যমে দেশের সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা ‘জাতীয় শিল্পনীতি-২০১৬’ তে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে শিল্প উন্নয়নের অন্যতম মাধ্যম হিসাবে গণ্য করেছি। আমাদের গৃহীত কর্মসূচির ফলে দেশব্যাপী টেকসই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের দ্রুত প্রসার ঘটছে। উদ্যোক্তাবান্ধব নীতির কারণে প্রতিনিয়ত নারীরা ব্যবসায়ে মনোনিবেশ করছে। ফলে দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির অনেক সূচকে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে।’

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে সরকার গঠন করে এখন দেশকে একটি শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়েছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। বিশ্বে এখন বাংলাদেশ মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৫২ মার্কিন ডলারে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশে উন্নীত। বর্তমানে ১৯৯টি দেশে ৭৫০টি পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে ৪১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানির হার বেড়ে যাওয়ার ফলে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে উল্লেখ করে তিনি জানান, বর্তমানে দেশের রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে সারাদেশে ১০০টি ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘দেশীয় কাঁচামালনির্ভর শিল্পায়নের পাশাপাশি অঞ্চলভিত্তিক কাঁচামালের সহজলভ্যতা বিবেচনা করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করছি। চাহিদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহার ও উৎপাদিত পণ্যের প্রসার-প্রচার ও বাজারজাতকরণেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

সম্প্রতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে বাংলাদেশের এসএমই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে বুলগেরিয়ার এসএমই প্রমোশন এজেন্সি এবং তুরস্কের এসএমই ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের মধ্যে দু’টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এর ফলে ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রসারের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে দু’টি দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা জোরদার হবে।

দেশের ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের বিকাশে জেলায় এবং উপজেলায় এসএমই পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে এবং এ পরামর্শ কেন্দ্রগুলো এসএমই শিল্প প্রসারে ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার হিসেবে কাজ করবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

শিল্পের বিকাশ হলেই কর্মসংস্থান বাড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার শিল্পের বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে। দেশে প্রায় ১০ লক্ষ এসএমই প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিবছর শুধুমাত্র এসএমই খাতেই কমপক্ষে ১০ লাখ বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে।

সরকার নিজে ব্যবসা করে না, বরং সহায়কের ভূমিকা পালন করে। সেজন্য দেশে বেসরকারি খাত ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বিভিন্ন দেশের পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তি আয়ত্তকরণ এবং পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পণ্যের বাজার অনুসন্ধান এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী সেসব পণ্য উৎপাদন করতে হবে। মুষ্টিমেয় কয়েকটি পণ্যের ওপর রপ্তানি নির্ভরশীলতা কমিয়ে আমাদের এখন রপ্তানি বহুমুখীকরণের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এজন্য সরকারের সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

নারীদের ক্ষমতায়ন ও আর্থিক উন্নয়নের জন্য সরকারের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

এসএমই মেলা দেশে উৎপাদিত এসএমই পণ্যের পরিচিতি বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্রেতা আকর্ষণ ও বাজার সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে অভিমত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের মেলা আয়োজনের মাধ্যমে এসএমই খাতের অনেক সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হবে এবং যথাযথ স্বীকৃতি পাবে।

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিল্প সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কে এম হাবিবুল্লাহ। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী মেলায় যান এবং বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।