‘আপনি কি আদালতকে থ্রেট করছেন?’

প্রকাশিত: ১১:১৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৪, ২০১৮

‘আপনি কি আদালতকে থ্রেট করছেন?’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন রবিবার পর্যন্ত স্থগিত করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।আপিল শুনানি নিয়ে এজলাসে খালেদার আইনজীবীরা হট্টগোল করেন। এ সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদকে প্রধান বিচারপতি বলেন,‘আপনি কি আদালতকে থ্রেট করছেন? থ্রেট দিবেন না’।

বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

গত সোমবার খালেদা জিয়াকে চারমাসের জামিন দেয় হাইকোর্ট। আগামী রবিবারের মধ্যে খালেদার জামিন আদেশে বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল দায়ের করতে বলেছেন আপিল বিভাগ।

এসময় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন,‘আমরা পাবলিক পারসেপশনের দিকে তাকাই না। কোর্টকে কোর্টের মত চলতে দিন’।

শুনানির শুরুতেই দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘হাইকোর্ট ৪টি কারণ দেখিয়ে খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছেন। আমরা এখনও সে আদেশের সার্টিফায়েড কপি পাইনি। আদেশের কপি পেলে লিভ টু আপিল করবো।’

এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সিপি ফাইল করে আসেন।’

তখন দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘সিপি ফাইল করতে রবিবার-সোমবার পর্যন্ত আমাদেরকে সময় দেয়া হোক। এ পর্যন্ত জামিন স্থগিত রাখা হোক।’

এর পর আদালত বলেন, ‘ঠিক আছে সিপি ফাইল করে আসেন রবিবারের মধ্যে। এ পর্যন্ত জামিন স্ট্রে থাকবে।’

তখন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও খালেদার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমাদেরকে আগে শুনেন। আমাদের বক্তব্য তো শুনেন নাই। আমাদের না শুনে এভাবে আদেশ দিতে পারেন না।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘শুনতে হবে না। রবিবার পর্যন্ত তো স্থগিত দিয়েছি। ওই দিন আসেন তখন শুনবো।’

অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আপনি যে একতরফাভাবে শুনানি করে আদেশ দিলেন এতে আদালতের প্রতি পাবলিক পারসেপশন খারাপ হবে।’

জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা পাবলিক পারসেপশনের দিকে তাকাই না। কোর্টেকে কোর্টের মত চলতে দিন।’

এরপর জয়নুল আবেদীন ও এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘না শুনেই তো আদেশ দিলেন।’

আদালত বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছি। আমাদের শোনার দরকার নেই।’

জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এ মামলায় চেম্বার আদালত তো স্ট্রে দেয়নি। এই সময়ের মধ্যে আসামিও বের হবে না। তাই স্ট্রে’র প্রয়োজন নেই।’

এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা তো শুনানির সুযোগ পেলাম না।’

এরপরই কার্যতালিকা থেকে অন্য মামলা শুনানি শুরু হয়।

শুনানির এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন আহমদ দাঁড়িয়ে আদালতকে বলেন, ‘আপনি তো না শুনেই একতরফা আদেশ দিলেন। আমাদের কথা শুনতে হবে। কেন শুনবেন না।’

তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কার কথা শুনবো, কার কথা শুনবো না তা কি আপনার কাছে শুনতে হবে।’

গিয়াস উদ্দিন আবারও একটু উত্তেজিত হয়ে একই কথা বললে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি কি আদালতকে থ্রেট করছেন?’

গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘শুনে তারপর আদেশ দিতে হবে।’

তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘থ্রেট দিবেন না।’

এক পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আপনি তো কোর্টকে শেষ করে দিলেন।’

তখন অ্যাটর্নি কোনও উত্তর না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়েই ছিলেন। একদল আইনজীবী দালাল দালাল বলতে বলতে আদালত কক্ষ ত্যাগ করেন।

প্রসঙ্গত, ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং তার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ আরও পাঁচজনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান।

রায় ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে। এখনো তিনি কারাগারেই রয়েছেন।