খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত হচ্ছে, সহজে মিলছে না মুক্তি

প্রকাশিত: ১১:১৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৪, ২০১৮

খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত হচ্ছে, সহজে মিলছে না মুক্তি

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাস আরো দীর্ঘায়িত হচ্ছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন রবিবার পর্যন্ত স্থগিত করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এছাড়াও বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক বিভিন্ন মামলার সক্রিয়তা তার মুক্তির সম্ভাবনাকে ক্ষীণ করে দিচ্ছে বলেই অভিমত বিশ্লেষকদের।

এদিকে বহুল আলোচিত জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ২৮ মার্চ বিশেষ আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ১৩ মার্চ রাজধানীর ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ ৫ নম্বর আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান এ নির্দেশ দেন।

এব্যাপারে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে বিশেষ জজ ৫ নম্বর আদালতে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে হাজির করার বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানি শেষে বিচারক তাকে ২৮ মার্চ আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেন।

হঠাৎ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায়ে কারাগারে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মানহানির মামলায় আবারও গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করা হয়।

বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম আহসান হাবীবের আদালতে জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী এই আবেদন করেন। বিচারক শুনানি শেষে আবেদনটি আমলে না নিয়ে বাদীকে ফেরত দিয়েছেন।

এ বি সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানান, এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারিও খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আবেদন করেছিলেন তিনি। তবে সেদিনও আদালত আবেদনটি আমলে না নিয়ে ফেরত দেন। সে কারণে বুধবার আবারও আবেদন করেছিলেন তিনি।

মানহানির অভিযোগ এনে জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকীর দায়ের করা একটি মামলায় গত বছরের ১২ অক্টোবর বিএনপির চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন ঢাকা মহানগর হাকিম নূর নবীর আদালত।

আপিল বিভাগের শুনানি প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেছেন, আমাদের বক্তব্য না শুনে দেশের সর্বোচ্চ আদালত খালেদা জিয়ার জামিন রোববার পর্যন্ত স্থগিত করেছেন। আদালতের এই আদেশে আমরা ব্যথিত। এই আদালতের আদেশের বিষয়ে কী ভাষায় আপনাদের কাছে বর্ণনা করব, তা আমরা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।

বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সভাপতি কক্ষের সামনে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।

জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা ধারণা করেছিলাম, চিরাচরিতভাবে আপিল বিভাগ যেটা করেন, উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনেন, তারপর আদেশ দেন। আজকের বিষয়টি হলো, আপিলটি দুদকের আইনজীবী উপস্থাপন করার সঙ্গে সঙ্গে বললেন (আদালত) যে আগামী রোববার সিপি (লিভ টু আপিল বা আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) ফাইল করেন। জামিন আগামী রোববার পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।

জয়নুল আবেদীন আরো বলেন, আমাদের কোনো বক্তব্য তিনি (প্রধান বিচারপতি) শুনলেন না। আইনগতভাবে এই মামলাটি মোকাবিলা করার জন্য নূন্যতম সুযোগ আমাদের দিলেন না। না দিয়ে স্টে অর্ডার অনুমোদন করলেন। আমরা এই আদেশে অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছি।

এদিকে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেছেন, ‘আপিল বিভাগে খালেদার জামিন রোববার পর্যন্ত স্থগিত করেছেন। আদালতের এই আদেশে আমি আনন্দিত। আজকের জন্য আমি হ্যাপি।’

অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্ট থেকে জামিন মঞ্জুরের পর জানা গিয়েছিল অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন গ্রহণ করে হাজিরা পরোয়ানা (পিডব্লিউ) জারি করেছে কুমিল্লার একটি আদালত।

একই সঙ্গে তাকে ২৮ মার্চ ওই আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে কিছুটা স্পষ্ট হয়ে যায় বেগম খালেদা জিয়ার সহসাই মুক্তি মিলছে না। ১২ মার্চ বিকেলে কুমিল্লার আমলি আদালত-৫–এর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মুস্তাইন বিল্লাহ ওই আদেশ দেন। হাজিরা পরোয়ানা ইতিমধ্যে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কুমিল্লার কোর্ট পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানতে চাইলে সুব্রত ব্যানার্জি বলেন, ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করা হলে আগুনে পুড়ে আটজন যাত্রী নিহত হন। এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালত আগেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

১২ মার্চ গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর কুমিল্লার আদালতে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আবেদন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিকেলে আদালতের বিচারক তার বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করেন। একই সঙ্গে ২৮ মার্চ তাকে কুমিল্লার আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। হাজিরা পরোয়ানার কপি বিকেল সাড়ে তিনটায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে কপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হবে।

এমতাবস্থায় ‘কুমিল্লার মামলায় খালেদা জিয়া জামিন না পেলে কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন না’ বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেলারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম। ১৩ মার্চ দুপুরে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে হাইকোর্টের চেম্বার জর্জ আদালত জিয়া অরফানেজ দূর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্ট বেঞ্চ চার মাসের জন্য জামিন মঞ্জুর করলে সরকার পক্ষ থেকে জামিন বাতিলের আবেদন করেন।

কিন্তু চেম্বার জজ হাইকোর্টের জামিন বহাল রেখে, আবেদনটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আদেশ দিয়েছিলেন। আর এই আদেশের পর এক প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। এরপর পুরান ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়াকে সেখানে রাখা হয়।

একদিকে জামিন জন্য আইনী লড়াই অন্যদিকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, এই বাস্তবতায় আপাদত খালেদা জিয়ার ঘটনাবহুল এই কারাভোগ হয়তো দীর্ঘ হবে, ফলে মুক্তি অনিশ্চিতই থাকছে।