ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে সিএমএইচে স্থানান্তর

প্রকাশিত: ১০:৪১ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩, ২০১৮

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে সিএমএইচে স্থানান্তর

হামলার শিকার ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) আনা হয়েছে।

শনিবার বিকাল ৫টা ৩৫মিনিটের দিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) হামলার শিকার হন ড. জাফর ইকবাল। এরপর তাকে নেওয়া হয় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

রাত ৮টা ৪০ মিনিটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ড. জাফর ইকবালকে ঢাকা নেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শাবিপ্রবির মুক্তমঞ্চ এলাকায় একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন ড. জাফর ইকবাল। অনুষ্ঠানে এক পর্যায়ে তার মাথায় পেছন থেকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন এক যুবক। এরপর উপস্থিত শিক্ষার্থীদের কাছে গণপিটুনির শিকার হন যুবক। পুলিশ তাকে হেফাজতে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করছে।

হামলাকারী ওই যুবকের পরিচয় জানা যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করছে, এই যুবক তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন।

সিলেট মহানগর পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) জ্যোতির্ময় সরকার তপু জানান, যুবককে চিকিৎসা দিয়ে তার কাছ থেকে পরিচয় ও হামলার তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

হামলায় বাধা দিতে গেলে আহত হন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইব্রাহীম।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের একটি উৎসব ছিল। সেই উৎসবে অংশ নিয়ে অন্যদের সঙ্গে মুক্তমঞ্চে বসে ছিলেন মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। এক যুবক হঠাৎ পেছন থেকে তার মাথায় ছুরিকাঘাত করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে পুলিশের একই মাইক্রোবাসে করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর প্রতিবাদে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাস ও রাজধানীর শাহবাগের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বিকাল ৫টা ৩৫ মিনিটের দিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে এক অনুষ্ঠানে অধ্যাপক জাফর ইকবালকে ছুরিকাঘাত করে এক যুবক। পরে তাকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীরা হামলাকারীকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। বর্তমানে তাকে আটক রাখা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, স্যার মুক্তমঞ্চে বসেছিলেন। সামনে একটি রোবট প্রতিযোগিতা হচ্ছিল। হঠাৎ এক যুবক এসে স্যারের মাথার পেছনে ছুরি দিয়ে আঘাত করে।

ওই তরুণকে বেদম পেটানোর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-২ এ আটকে রাখা হয়েছে। তবে, হামলাকারী ওই তরুণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাকি বহিরাগত তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তাকে বর্তমানে সিলেটের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকায় গতকাল শুক্রবার ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠান চলছিল। গতকাল বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে এর উদ্বোধন করেছিলেন ড. জাফর ইকবাল। শনিবার বিকালে এর সমাপনী অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চ এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক মো. রাশেদ তালুকদার জানিয়েছেন, মুক্তমঞ্চ এলাকায় পেছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ড. জাফর ইকবলের মাথায় আঘাত করা হয়। তবে সঙ্গে সঙ্গে হামলাকারীকে আটক করা হয়েছে।

ড. জাফর ইকবালের ব্যক্তিগত সহকারী জয়নাল আবেদীন জানান, স্যারকে মাথায় আঘাত করা হয়েছে। এ মুহূর্তে তিনি সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক জানান, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে নিউরোলজি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার রাশেদুন্নবীর অধীনে চিকিৎসাধীন আছেন।

এদিকে, সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার আবদুল ওহাব জানিয়েছেন, ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলা হয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। হামলাকারীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আটক করেছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। আমরা ঘটনাস্থলে যাচ্ছি।

জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, একজনকে আটক করা হয়েছে। তবে তার নাম পরিচয় এখনো জানা যায়নি। আমরা তার পূর্ণ পরিচয় জানতে চেষ্টা করছি।

কী কারণে ওই তরুণ জাফর ইকবালের উপর হামলা করেছেন, সে বিষয়ে কিছু তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিং নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন জাফর ইকবাল। র‌্যাগিংয়ের দায়ে পাঁচ ছাত্রের শাস্তি দেওয়া হলে তিনি বলেছিলেন, এদের শাস্তির পরিমাণ কম হয়েছে, তাদের পুলিশে দেওয়া উচিৎ।

আবার এর পেছনে জঙ্গিদের হাত থাকতে পারে বলেও সন্দেহ রয়েছে কোনো কোনো শিক্ষার্থীর। জাফর ইকবাল বরাবরই জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ।

অপরদিকে আহত ড. জাফর ইকবাল শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন সিলেটের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. দেবপদ রায়।

তিনি বলেন, ‘আমি ওটি’র ভিতরে ছিলাম। স্টিল নাও হি ইজ আন্ডার এনেস্থেশিয়া। ৬-৭ জন প্রফেসর সেখানে উপস্থিত আছেন। তারা অপারেশন করেছেন। ওনার কন্ডিশন খারাপ না, শঙ্কামুক্ত।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের একটি উৎসব ছিল। সেই উৎসবে অংশ নিয়ে অন্যদের সঙ্গে মুক্তমঞ্চে বসে ছিলেন মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। সন্ধ্যার ৬টার দিকে এক যুবক হঠাৎ পেছন থেকে তার মাথায় ছুরিকাঘাত করেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে পুলিশের একই মাইক্রোবাসে করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তারপর তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) পাঠিয়ে দেয়া হয়।