২০১৪ সালের মতো একতরফা নির্বাচন করার চক্রান্ত করছে সরকার : ফখরুল

প্রকাশিত: ১১:৩২ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮

২০১৪ সালের মতো একতরফা নির্বাচন করার চক্রান্ত করছে সরকার : ফখরুল

‘২০১৪ সালের মতো ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন করার চক্রান্ত করছে সরকার, খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে কোন নির্বাচন হবে না’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন তিনি। এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল কাইয়ুম উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে মিথ্যাচার করেছেন। এমন কতগুলো কথা বলেছেন যার সাথে সত্যের কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচন নিয়ে উনি (প্রধানমন্ত্রী) কথা বলছেন, নির্বাচন ঠেকে থাকবে না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এর সঙ্গে উনার অভ্যাস আছে, অভিজ্ঞতা আছে। ২০১৪ সালে যে নির্বাচন তারা করেছেন, সেখানে শতকরা ৫% মানুষও ভোট দিতে আসেনি…’।

তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়াকে নিয়ে তাদের (সরকার) এতো আশঙ্কা কেন? উনি নির্বাচন করতে পারবেন কি পারবেন না তা নিয়ে এতো ভয় কেন? নির্বাচন না করতে পারলে আপনাদের সুবিধা হয়, আমরা ভালো করেই বুঝি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই- বেগম জিয়া নির্বাচন না করলে এদেশে নির্বাচন কারো কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এটা বাস্তবতা। এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করে যারা নির্বাচন করতে চায়, তারা আসলে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায়। একতরফা নির্বাচন করতে চায়। সেটা এদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্যে, একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করবার জন্য আবার একটা একতরফা ও একদলীয় নির্বাচন করার পাঁয়তারা তারা করছেন। সেভাবে একটা নীলনকশা করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘সেই নীলনকশা অনুযায়ী দেশনেত্রীকে একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে একটা সম্পূর্ণ ভুয়া নথি তৈরি করে, তারা আদালতের ঘাড়ে বন্দুক চাপিয়ে দণ্ড দিয়েছেন।’

বিএনপির গঠনতন্ত্রের ‘৭ ধারা’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে একটা কথা মানতে হবে- এই দণ্ডটা কারা দিয়েছে? একটি আদালত এই দণ্ড দিয়েছে, সেই আদালত কার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে।’

তিনি বলেন, ‘গঠনতন্ত্রে মেজর কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমি একটা বিষয় বুঝতে পারি না- বিএনপির গঠনতন্ত্র নিয়ে কে প্রধান হলো, না হলো উনাদের এতো মাথা ব্যথা কেন?’

খালেদা জিয়ার রায়ের কপি পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি আইনগত দিক বলতে পারব না, এটা আইনজীবীরা জানেন। তবে অবশ্যই আপিল করা হবে। আশা করি, এই সপ্তাহে আপিল ফাইল করা হবে।’

এর আগে সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আয়োজিত বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এক মানববন্ধনে তিনি বলেন, ‘তারা চায়, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে আবারও একটি ষড়যন্ত্রমূলক একদলীয় নির্বাচন করে ক্ষমতা ধরে রাখতে। খালেদা জিয়া বাইরে থাকলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারবে না। আর সে জন্যই নিজেদের একদলীয় শাসনকে দীর্ঘায়িত করতেই মিথ্যা, সাজানো ও জাল-জালিয়াতি করে তৈরি করা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দেশের কোনো মানুষ ভোট দিতে যায়নি। আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে বিনা ভোটে ক্ষমতা দখল করেছে। এরপর দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের করায়ত্ত করেছে। দেশের মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচারালয়কেও এ সরকার নিজেদের করায়ত্ত করে রেখেছে। প্রধান বিচারপতিকেও অন্যায়ভাবে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলনকে স্তব্ধ করার জন্য এবং আসন্ন নির্বাচনে তিনি (খালেদা জিয়া) যদি থাকেন এবং নির্বাচনে তিনি যদি নেতৃত্ব দেন তাহলে তারা (আ.লীগ) কোনভাবেই আর ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবে না, এই জন্য।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দুঃখ আমরা রাখবো কোথায়, আমাদের কষ্ট আমরা রাখবো কোথায়। যে নেত্রী গণতন্ত্রের জন্য তার সমস্ত জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। তিনি গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার জন্য সারা জীবন লড়াই সংগ্রাম করেছেন রাজপথে চারণ কবির মতো ঘুরে বেড়িয়েছেন সেই নেত্রীকে আজকে এই অনির্বাচিত অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকার তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে সেই গণতন্ত্রের নেত্রীকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ করেছে।’

মির্জা ফখরুল নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আসুন দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে আমরা সোচ্চার হই। আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনবো ইনশাআল্লাহ। আজকে মা-বোনেরা জেগেছেন তাদেরকে আমি অনুরোধ জানাবো আপনাদের সবাইকে নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। দেশকে উদ্ধার করতে হবে, দেশনেত্রীকে উদ্ধার করতে হবে। কারণ এখন দেশ এবং খালেদা জিয়া এই দুটো যেমন একাকার হয়ে গেছেন তেমনিভাবে গণতন্ত্র এবং খালেদা জিয়াও একাকার হয়ে গেছেন। তাই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে, জনগণের শক্তি দিয়ে।’

ফখরুল বলেন, ‘প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের দায়িত্ব সকল গণতান্ত্রিককামী মানুষদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই যে ফ্যাসিস্ট সরকার যারা আজকে বাংলাদেশের মানুষের বুকে জবরদখল পাথরের মতো চেপে বসে আছে তাদেরকে অপসারণ করতে হবে। দেশে গণতন্ত্রের মুক্ত বাতাস বইতে হবে। একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা আজকে ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রতিটি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক ও শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে তাদের কোন বিচার হচ্ছে না। কারণ সেগুলোর সাথে সরকার জড়িত।’

জনগণের প্রতিবাদের মুখে সরকারকে বিদায় নিতে হবে: ফখরুল
বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণের প্রতিবাদের মুখে সরকারকে বিদায় নিতে হবে। এ সময় তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানান।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে তৃতীয় দফায় আজ শনিবার গণস্বাক্ষর কর্মসূচির উদ্বোধন হয়। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের নেতাকর্মীদের প্রতি এই আহ্বান জানান। এসময় তিনি বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সব ধরনের উষ্কানিমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকারি দল উস্কানি দিবে যাতে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়, তারা রাজনৈতিক সুবিধা নিতে পারে। আমরা তাদের সেই সুযোগ দিব না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আমরা আদায় করব।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের যে উস্কানি, নীলনকশা তা ব্যর্থ করে দিয়ে জনগণের বিজয়কে ছিনিয়ে আনতে হবে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটময় মুহূর্তে আমরা উপস্থিত হয়েছি।’

‘দেশের স্বাধীনতা থাকবে কি না, আমাদের স্বাধীন অস্তিত্ব বাচঁবে কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আর সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। তাই বলব, আর বসে না থেকে সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে আসুন, সোচ্চার হন, প্রতিবাদ করুন বন্ধুগণ,’ যোগ করে তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য যে কয়জন নেতা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। তিনি জনগণের রায়ে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, যিনি কখনও কোনও নির্বাচনে পরাজিত হননি। আজকে সেই খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। অগণতান্ত্রিক আওয়ামী লীগ সরকার বল প্রয়োগ করে বেআইনিভাবে একটি মিথ্যা, সাজানো মামলার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়াকে নির্জন কারাগারে আটক করে রেখেছে। সেই কারাগার থেকে তাকে মুক্ত করবার জন্য, গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আন্দোলন করছি।’

তিনি বলেন, ‘এই অগণতান্ত্রিক সরকার সম্পন্নভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। জনগণের কোনও সমর্থন তাদের প্রতি নেই। তাই তারা তাদের পুরানো একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য ভিন্নরূপে খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করেছে। হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। আমাদের দলের স্থায়ী কমিটি থেকে তৃণমূল পর্যায়ে এমন কোনও জেলা নেই যেখানে গ্রেফতার করা হয়নি। প্রতিদিন নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বর্তমান অবৈধ সরকার মিথ্যা, সাজানো মামলায় তাকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক করে রেখেছে। কারাগার থেকে তাকে মুক্ত করবার জন্য, দেশের হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র মুক্ত করবার জন্য, মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। সেই আন্দোলন আজ চূড়ান্ত পর্যায়ে। তার অংশ হিসেবে আজকের এই গণস্বাক্ষর কর্মসূচি, এ কর্মসূচি চলতে থাকবে।

গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা অনির্বাচিত, অনৈক সরকারের পদত্যাগ ও খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছি। খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়ে দেশের মানুষ ও গণতন্ত্রকে কারাগারে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি দেশের সাধারণ মানুষ ও গণতন্ত্রের মুক্তি।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, যার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে এবং দেশের মানুষ আবারও শান্তিতে থাকতে পারবে।

দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজেই বলেছেন, বিএনপির অক্ষমতার কারণে তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। আমি তাকে বলতে চাই- বিএনপি সন্ত্রাস নয়, শান্তিতে বিশ্বাস করে। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে দুর্বলতা ভাবলে ভুল করবেন। আপনারা আমাদের উস্কানি দিচ্ছেন, যাতে সেই সুযোগে নিজেরা অপকর্ম, নাশকতা করে বিএনপির ওপর দোষ চাপাতে পারেন।