২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:০৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৮, ২০১৮
গাজীপুর: চারদিন বিরতি দিয়ে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ বছরের ইজতেমা।
দ্বিতীয় পর্বের এই ইজতেমায় যোগ দিতে গতকাল বুধবার থেকেই আসতে শুরু করেছেন দেশি বিদেশি মুসল্লিরা। ইজতেমা ময়দানের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
প্রথম পর্বের ন্যায় দ্বিতীয় পর্বের মোনাজাতও বাংলায় পরিচালনা করবেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. জোবায়ের। এর আগে বাংলায় হেদায়েতি বয়ান করা হবে।
গত রবিবার (১৪ জানুয়ারি) শেষ হয় প্রথম পর্বের ইজতেমা। ভারতের মাওলানা মোহাম্মদ সা’দ কান্ধলভিকে ছাড়াই এবারের বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত সমাপ্ত হয়েছে।
টঙ্গীস্থ ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সা’দ কয়েক বছর ধরে ইজতেমায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করলেও এবার তার পরিবর্তে কাকরাইল মসজিদের ইমাম হজরত মাওলানা যোবায়ের মোনাজাত পরিচালনা করেন।
ভারতের মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভিকে নিয়ে বিতর্ক ওঠার পর মাওলানা সা’দ বাংলাদেশে এলেও টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ না নিয়েই শনিবার ফিরে যান।
এদিকে নানা বিতর্কের অবসান ঘটাতে মাওলানা সা’দ এবারের বিশ্ব ইজতেমায় অংশ না নিয়ে ফিরে যাওয়ায় তার অনুপস্থিতি স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছেন না তার অনুসারীরা। তাই অর্ধশতাধিক বিদেশি মুসল্লি ইজতেমার প্রথম পর্ব সম্পন্ন হওয়ার আগেই ময়দান থেকে চলে যান। আগামী বছর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে ১১ জানুয়ারি থেকে।
বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের তাৎপর্য
শাহীন হাসনাত: নিজের মনের আশা, অভিলাষ, অভাব, অভিযোগ ইত্যাদি পূরণের জন্য প্রকাশ্যে বা গোপনে মানুষ আল্লাহর কাছে যে প্রার্থনা করে থাকে সেটাই মোনাজাত নামে পরিচিত। পবিত্র কোরানে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমার নিকট দোয়া কর, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব।’
হাদিসে আছে, ‘দোয়া হচ্ছে ইবাদতের সার বস্তু।’ দুনিয়ায় আগত প্রত্যেক নবী-রাসুল (আ.) ও আউলিয়ায়ে কেরাম (রহ.) আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া ও কান্নাকাটি করতেন। দোয়া, কান্নাকাটি ও অনুনয়-বিনয়ের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনই ছিল তাদের প্রকৃত চাওয়া-পাওয়া। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক স্থাপিত হয়। দোয়া মানুষকে অহঙ্কার থেকে দূরে রাখে আর মুমিনের কোনো দোয়া কখনো বৃথা যায় না।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হচ্ছে, হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি দোয়া করে, যে দোয়াতে কোনো পাপ থাকে না ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না, তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দোয়া অবশ্যই কবুল করে নেন। যে দোয়া সে করেছে হুবহু সেভাবে তা কবুল করেন অথবা তার দোয়ার প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন কিংবা এ দোয়ার মাধ্যমে তার ওপর আগত কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন। এ কথা শুনে সাহাবিরা বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দোয়া করতে থাকব। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা যত প্রার্থনাই করবে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করতে পারেন’ সহিহ বোখারি।
মোনাজাত একটি আলাদা ইবাদত। এর জন্য রয়েছে কিছু বিধি-বিধান, শর্তাবলি, নিয়ম-কানুন। মোনাজাতকালে এগুলো পালন করতে হবে। ইসলামের উপরোক্ত বিধানের আলোকে আজ লাখ লাখ মুসলমান বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে শরিক হবেন। জীবনের গুনাহগুলোর জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি সুখ-শান্তি ও উভয় জগতের মঙ্গল কামনা করবেন।
আজকের আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। তাবলিগের মূল কাজের সঙ্গে আখেরি মোনাজাতের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও নানা কারণে ইজতেমার আখেরি মোনাজাত বর্তমানে বিশ্ব ইজতেমার অন্যতম অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। মূলত ইজতেমায় আসা তাবলিগি সাথীদের যারা বিভিন্ন মেয়াদে দীনের দাওয়াত নিয়ে যাচ্ছেন তাদের জন্য বিশেষ বয়ান ও তাদের সফলতা কামনা করে কৃত বিশেষ মোনাজাতটি আখেরি মোনাজাত নামে সমাজে ব্যাপক স্বীকৃতি পেয়েছে।
আখেরি মোনাজাতের আগে দীনের দাওয়াত নিয়ে যারা তাবলিগে যাচ্ছেন তাদের উদ্দেশে দেয়া হয় বিশেষ হেদায়েতি বয়ান। বিশ্ব ইজতেমা তাবলিগ জামাতের সক্রিয় সাথীদের (কর্মী) বার্ষিক সম্মেলন হলেও এতে সর্বস্তরের মুসলমানরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে থাকেন। মূলত ধর্মীয় চেতনাবোধ থেকেই সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ। বিশেষ করে শেষদিনের আখেরি মোনাজাতে অংশ নেয়ার জন্য যেভাবে মানুষ টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানের দিকে ছুটে যায় তা সত্যিই এক প্রচণ্ড আবেগ ও ধর্মীয় চেতনার বহিঃপ্রকাশ।
ইজতেমার দিনগুলোতে টঙ্গী পরিণত হয় মুসলমানদের উৎসব নগরীতে আর আখেরি মোনাজাতের দিন কান্নার নগরীতে। ইজতেমার শেষ দোয়ার দিন যে যেখানে পারেন দু’হাত তুলে অশ্রুসিক্ত নয়নে আল্লাহর দরবারে ‘আমিন’ ‘আমিন’ বলে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। মানুষের মনের গহিনের গভীর আশা, পুণ্যবান মানুষের অসিলায় পরম দয়াময়-দয়ালু আল্লাহ হয়তো ঐশীপ্রেমের ঝরে পড়া অশ্রুধারায় সবাইকে ক্ষমা করে দেবেন।
এ ছাড়া এটা যেহেতু অনেক বড় সমাবেশ এবং সমাবেশের অধিকাংশ মানুষই মুসাফির আর হাদিসের ভাষ্যানুযায়ী মুসাফিরের দোয়া খুব দ্রুত কবুল করা হয়। অন্যদিকে ইজতেমার উপস্থিতি ও সমাবেশের সামগ্রিক বিবেচনায় দীর্ঘ মোনাজাত করা হয়। ওই মোনাজাতে দেশ, জাতি ও সমগ্র মুসলিম উম্মাহর শান্তি, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা কামনা করা হয়। এক কথায় বলা চলে, ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে সর্বস্তরের, সব শ্রেণী-পেশার মানুষের কথা উঠে আসায় আখেরি মোনাজাতের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
EDITOR & PUBLISHER :
DR. ARIF AHMED MOMTAZ RIFA
MOBILE : 01715110022
PHONE : 0821 716229
Office : Central Market (1st floor),
Bandar Bazar (Court Point),
Sylhet – 3100, Bangladesh.
E-mail : sylhetsangbad24@gmail.com
Hello : 01710-809595
Design and developed by M-W-D