‘আবারও আসতে পারে ওয়ান ইলেভেন’

প্রকাশিত: ১২:২০ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০১৮

‘আবারও আসতে পারে ওয়ান ইলেভেন’

ওয়ান ইলেভেনে বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা বলেছেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের লক্ষ্য ঠিক ছিল কিন্তু বাস্তবায়নের পদ্ধতি ছিল ভুল।’

তারা মনে করেন, ‘রাজনৈতিক বিরোধ নিস্পত্তি না হলে আবারও বাংলাদেশে ওয়ান ইলেভেনের মতো ঘটনা ঘটতে পারে।’ ওয়ান ইলেভেনে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বললে তারা এরকম মন্তব্য করেছেন।

ওয়ান ইলেভেনের তত্বাবধায়ক সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা ছিলেন ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেন কারও ষড়যন্ত্র নয়, এটা ছিল রাজনীতিবিদদের সৃষ্টি। রাজনীতিবিদদের অযোগ্যতা, ক্ষমতা লিপ্সা আর ব্যর্থতার ফসল হলো ওয়ান ইলেভেন।’

তিনি দাবি করেন, ‘২০০৭ এ তত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিলে দেশের মানুষ স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে, তারা হাফ ছেড়ে বাঁচে।

ওয়ান ইলেভেনের অন্যতম উপদেষ্টা ছিলেন হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেন ছিল জন আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলন।’ তাঁর মতে, ‘যে লক্ষ্য নিয়ে ওয়ান ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছিল তা অর্জিত হয়েছিল। কারণ ওই সরকার একটি শুদ্ধ ভোটার তালিকা করতে সক্ষম হয়েছে। ভোটার পরিচয় পত্র দিতে পেরেছে এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পেরেছে।’ তিনি মনে করেন, ভুল ত্রুটি সত্বেও ওই সরকার তাঁর অভিষ্টে পৌছুতে পেরেছে।

ওয়ান ইলেভেনের সময় আরেকজন উপদেষ্টা ছিলেন অ্যাডভোকেট হাসান আরিফ। তিনি মনে করেন ‘দুই নেত্রীকে গ্রেপ্তার না করে বরং তাদের দিয়ে রাজনৈতিক সংস্কার করা হলে ভালো হতো।’ তিনি মনে করেন ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিক থেকে ওয়ান-ইলেভেন সরকার সফল। কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। এটা বাইরে থেকে করাও অসম্ভব।

প্রসঙ্গত,সর্বশেষ সেনা হস্তক্ষেপের কলঙ্কিত দিন তথাকথিত এক-এগারোর ১০ বছর পূর্তি আজ। ২০০৭ সালের এই দিনে নির্বাচনভিত্তিক গণতন্ত্রের ভিত আরো একবার দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই অবস্থা থেকে আজো বের হতে পারেনি বাংলাদেশ।

লগি-বৈঠার রাজনৈতিক সহিংসতা পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের পঞ্জিকায় এই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সৃষ্ট সঙ্ঘাতের সুযোগ নিয়ে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা আবির্ভূত হয় স্বরূপে। কথিত দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগে রাজনীতিকদের মুখে লেপন করা হয় কালিমা। ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ বাস্তবায়নে চলে নানামুখী তৎপরতা। কিন্তু জনগণ এক বছর পেরোতে-না-পেরোতেই জেগে ওঠে। দুই বছরের মধ্যেই অবসান হয় জবরদস্তিমূলক সেই শাসনের। ক্ষমতার ইতি টেনে নিরাপদ প্রস্থানে বাধ্য হয় মঈন-ফখরুদ্দীনের সেই সরকার।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে ২০০৬ সালের শেষ কয়েক মাস আওয়ামী লীগের আন্দোলনে উত্তপ্ত ছিল রাজপথ। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার দিন ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার আন্দোলন পৈশাচিকতায় রূপ নেয়। পল্টনে জামায়াতে ইসলামীর সাথে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে প্রাণ হারান ছয়জন।

এমনই এক অবস্থার মধ্যে রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে প্রধান উপদেষ্টা করে তার নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। কিন্তু শুরু থেকেই এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আওয়ামী লীগ আপত্তি তোলে।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যেতে থাকে। ওই সময়কার ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে ছিল- ৩ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ও এরশাদের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা; ৭ ও ৮ জানুয়ারি অবরোধের ডাক; ৮ জানুয়ারি বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি; ৯ জানুয়ারি বঙ্গভবনের আশপাশে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ এবং ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চোরাগোপ্তা হামলা; ১০ জানুয়ারি নির্বাচন প্রতিরোধে শেখ হাসিনার হরতাল-অবরোধসহ ৮ দিনের কর্মসূচি।

এমন প্রেক্ষাপটে দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে চলে যাচ্ছে অভিযোগ তুলে ১১ জানুয়ারি নির্ধারিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ১১ দিন আগে আনুষ্ঠানিক সামরিক অভ্যুত্থান না হলেও সেনাবাহিনী প্রধান মইন উ আহমেদসহ শীর্ষব্যক্তিরা রাষ্ট্রক্ষমতা করায়ত্ত করেন। বন্দুকের জোরে রাষ্ট্রপতিকে সরকারপ্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ এবং জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণায় স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে পদত্যাগ করেন উপদেষ্টা পরিষদের ১০ সদস্যের ৯ জন।