সিলেটের বিশাল জয়

প্রকাশিত: ৭:১৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩, ২০১৭

সিলেটের বিশাল জয়

বিপিএলে সিলেট ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে জয় পেয়েছে।

৬৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কোনো উইকেটই হারায়নি সিলেট সিক্সার্স। খেলতে হয়েছে মাত্র ১১.১ ওভার। সিলেটের দুই ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান ও আন্দ্রে ফ্লেচার চিটাগংয়ের বোলারদের কোনো সুযোগই দেননি। রিজওয়ান ৩৬ ও ফ্লেচার ৩২ রানে অপরাজিত ছিলেন।

এর আগে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) পঞ্চম আসরের ৩৭তম ম্যাচে সিলেট সিক্সার্সের বোলারদের তোপের মুখে পড়ে ৬৭ রানে অলআউট হয়েছে। এবারের আসরে এটিই সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড। ১২ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে চিটাগং ভাইকিংসের ব্যাটস ম্যানরা তাদের ৬৭ রানেই ইনিংস গুটিয়ে নেয়। এদিন নাসির নির্ধারিত ৪ ওভার বল করে ৩১ রানে ৫টি উইকেট তুলে নেন।

তার আগে রবিবার বেলা ১টায় চিটাগং ভাইকিংসের মুখোমুখি হয়েছে সিলেট সিক্সার্স। যেখানে টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিলেট অধিনায়ক নাসির হোসেন।

টিচাগাং প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে প্রথম ওভারেই পথ হারায় চিটাগং। নাসির হোসেনের করা প্রথম ওভারে ফিরে যান লুক রঞ্চি ও সৌম্য সরকার। চিটাগংয়ের তৃতীয় ওভারে আবার আঘাত হানেন নাসির। ফিরিয়ে দেন লুইস রিসকে। পরের ওভারে সিকান্দার রাজাকে ফেরান শরিফুল্লাহ। ৪৫ রানের মধ্যে তানভীর হায়দার ও স্টিয়ান ভ্যান জাইলকে ফিরিয়ে চিটাগংকে খাদের কিনারে নামিয়ে দেন নাসির। ৪ ওভারে ৩১ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নেন এই স্পিনার।

এরপর নাবিল সামাদ ও শরিফুল্লাহ মিলে গুটিয়ে দেন চিটাগং ভাইকিংসকে। নাবিল তিনটি ও শরিফুল্লাহ নেন বাকি দুটি উইকেট।

সাত দলের মধ্যে সিলেটের অবস্থানের কারনে এ ম্যাচটি তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কেননা লিগের বাকি ম্যাচে জয় পেলে, পাশপাশি রংপুর রাইডার্স যদি শেষ দুই ম্যাচে হেরে যায়। তবে শেষ চার নিশ্চিত করে প্লে-অফ খেলতে পারবে দলটি। নাসিরদের শেষ ম্যাচটি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে।

অন্যদিকে চিটাগংয়ের এবারের মৌসুমে আর কোনো আশাই নেই। ১০ ম্যাচে মাত্র দুটিতে জয় পাওয়া দলটি সবার শেষে।

৯৯ রানে জয়ী ঢাকা
৯৯ রানে জয় পেল ঢাকা ডায়নামাইটস। রাজশাহীকে হারিয়ে অনায়াসে জয় তুলে নেয় সাকিবের ঢাকা ডায়নামাইটস। ২০৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ১০৬ রানে গুড়িয়ে যায় রাজশাহী কিংস। এই জয়ের ফলে শেষ চারে পৌছেঁ গেল ঢাকা।

এর আগে প্রথমে ব্যাটিং করে ২০ ওভারে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ২০৫ রান সংগ্রহ করেছেন সাকিব আল হাসানরা।

ঢাকার রানের পাহাড়ে ওঠার পেছনে রংপুরের ফিল্ডারদের অবদান কম নয়। চারটি ক্যাচ মিস করেছেন মুমিনুলরা।

রাজশাহীর চরম বাজে ফিল্ডিংয়ের সুযোগে ঢাকার দুই ওপেনার জো ড্যানলি ও সুনিল নারিন বিশাল এক জুটি গড়েন। মূলতঃ তাদের দু’জনের এই জুটির উপর ভর করেই ঢাকা নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে তোলে ২০৫ । ফলে রাজশাহী কিংসের লক্ষ্য দাঁড়িয়েছে ২০৬।

প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে নারাইন আউট হতে পারতেন তৃতীয় ওভারে। সেবার তার ক্যাচ মিস করেন মুমিনল। পরের ওভারে এই ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানকে জীবন দেন কাজী অনিক। নারাইনের রান তখন ১১। সপ্তম ওভারে ক্যাচ ছাড়েন সামিত প্যাটেল। নারাইনকে আউট করার আরো দুটি সুযোগ নষ্ট করে রাজশাহীর ফিল্ডাররা।

এই জুটিতে ভাঙন ধরান মেহেদী হাসান মিরাজ। বোল্ড করে তিনি ফেরান সুনিল নারিনকে। আউট হওয়ার আগে নারিন খেলেন ৩৪ বলে ৬৪ রানের ঝড়ো ইনিংস। যাতে ছিল চারটি বাউন্ডারি ও ছয়টি ওভার বাউন্ডারির মার। আরেক ওপেনার জো ড্যানলি করেন ৫৪ বলে ৫৩ রান। যাতে ছিল চারটি বাউন্ডারি ও দুইটি ছক্কার মার। তবে ক্যামরন ডেলপোর্ট আজ জ্বলে ওঠার আগেই শূন্য রানে সাজঘরে ফিরে যান।

মাত্র ১৩ বলে ১ চার ও চার ছক্কার সাহায্যে ৩৩ রান করেন পোলার্ড। আর সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে আসে ১৩ রান। রাজশাহী কিংসের হয়ে কাজী অনিক দুইটি উইকেট নেন। যদিও ৪ ওভার বল করে তিনি দিয়েছেন ৫২ রান। মোহাম্মদ সামি, মিরাজ ও সামিত প্যাটেল একটি করে উইকেট নেন। মোস্তাফিজ ৪ ওভার বল করে কোনো উইকেট
এবারের আসরে দশ ম্যাচের পাঁচটিতে জিতেছে সাকিব আল হাসানের দল। এই ম্যাচটি জিতলেই সুপার ফোর নিশ্চিত হবে ঢাকার।

৪ উইকেটে কুমিল্লার জয়
৪ উইকেটে জয় পেয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ৯৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১৯.৩ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১০০ রান করে জয় পায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। টস হেরে আগে ব্যাট করে মাত্র ৯৭ রানে অলআউট হয়েছে রংপুর রাইডার্স।

এর আগে টস জিতে ফিল্ডিং করেছে কুমিল্লা। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক তামিম ইকবাল টস জিতে রংপুর রাইডার্সকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ।

শনিবার দুপুরে মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে টস অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১টায় ম্যাচটি শুরু হয়েছে। বেসরকারি টেলিভিশন গাজী টিভি ও মাছরাঙ্গা খেলাটি সরাসরি সম্প্রচার করছে।

আগের ম্যাচেই লক্ষ্য ছিল ক্রিস গেইলকে আউট করার। তবে সে সুযোগ না হলেও ম্যাককালামের উইকেট ঠিকই তুলে নিয়েছেলেন। কিন্তু দ্বিতীয়বারের দেখায় সেই ভুল আর করেননি মেহেদী হাসান। ক্রিস গেইলকে সামনে পেয়েই স্ট্যাম্প উড়িয়ে দিলেন ‘পুচকে’ মেহেদী!

শুধু গেইলই না গুনে গুনে আরও চার ব্যাটসম্যানকে তিনি বোল্ড করে সাজঘরের পথ ধরিয়েছেন। তার এই ঘূর্ণিতেই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে রংপুর রাইডার্স। তাই নির্ধারিত ২০ ওভার শেষ হবার আগেই সব ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরেছেন। ১৭.১ ওভারে সব ক’টি উইকেট হারিয়ে ৯৭ রান সংগ্রহ করে। ফলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৯৮।

এবারের আসরের এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন সংগ্রহ এটি। আর বিপিএলের সব আসর মিলেয়ে এটি যৌথভাবে ১৮তম সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর।

রংপুরের হয়ে সর্বোচ্চ ২৪ রান করেছেন ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম। ৩১ বল খেলে ২ চার ও এক ছয়ের সাহায্যে তিনি এই রান করেন। এছাড়া রংপুরের হয়ে মোহাম্মদ মিথুন করেছেন ১৭ আর সোহাগ গাজী ১২। রংপুরের আর কোন ব্যাটসম্যান দুই অংকের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি।

মেহেদীর হাসান চার ওভার বল করে মাত্র ২২ রান দিয়ে চার ব্যাটসম্যানকে যেমন বোল্ড করেছে, তেমনি উজ্জ্বল ছিলেন কুমিল্লার সাইফুদ্দীনও। তিন ওভার বল করে ২২ রান দিয়ে এই পেসারও নিয়েছেন ৩টি উইকেট। এছাড়া হাসান আলি ও আল-আমিন হোসেন ১টি করে উইকেট নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন।

১০ খেলায় অংশ নিয়ে সর্বাধিক ৮ ম্যাচ জেতা কুমিল্লার পয়েন্ট ১৬। অন্যদিকে সেরা চারে থাকার জোর লড়াই করা রংপুর রাইডার্সের পয়েন্ট ১০ খেলায় ১০ পয়েন্ট।

গ্রুপ পর্বের বাকি আর আটটি ম্যাচ। শনিবার থেকে শুরু হয়ে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে ম্যাচগুলো। এর পর ৮ ডিসেম্বর এলিমিনেটর ও কোয়ালিফায়ার রাউন্ডের একটি করে ম্যাচ হবে। ১০ ডিসেম্বর কোয়ালিফায়ার রাউন্ডের দ্বিতীয় ম্যাচ। ফাইনাল ম্যাচটি বসছে ১২ ডিসেম্বর।

এবারের আসরে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। ১০ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে তারা। তারা ৮ ম্যাচে জিতেছে, হেরেছে মাত্র দুটি ম্যাচে।

১০ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে খুলনা টাইটানস দ্বিতীয় ও সমান ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে ঢাকা ডায়নামাইটস তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এক ম্যাচ কম খেলে চতুর্থ স্থানে রংপুর রাইডার্স। মাশরাফির দলটির সংগ্রহ ১০ পয়েন্ট।

বাকি তিনটি দলের মধ্যে রাজশাহী কিংস ১০ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম, সিলেট সিক্সার্স ৭ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ এবং চিটাগং ভাইকিংস ৫ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে আছে।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস

দেশি : তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, লিটন দাস, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, আল আমিন হোসেন, আরাফাত সানি, অলক কাপালি, মেহেদী হাসান, মেহেদী হাসান রানা, এনামুল হক, রকিবুল হাসান।

বিদেশি : শোয়েব মালিক, হাসান আলী, ফাহিম আশরাফ, ইমরান খান, ফখর জামান, জস বাটলার, কলিন মানরো, মারলন স্যামুয়েলস, ডোয়াইন ব্রাভো, ড্যারেন ব্রাভো, মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান, সলোমন মিরে, রুম্মন রাইস।

রংপুর রাইডার্স

দেশি : মাশরাফি বিন মুর্তজা, মোহাম্মদ মিঠুন, রুবেল হোসেন, সোহাগ গাজী, শাহরিয়ার নাফীস, নাজমুল হোসেন অপু, জিয়াউর রহমান, ফজলে রাব্বী, আবদুর রাজ্জাক, ইবাদত হোসেন, ইলিয়াস সানি, নাহিদুল ইসলাম।

বিদেশি : ক্রিস গেইল, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, রবি বোপারা, ডেভিড উইলি, অ্যাডাম লিথ, জনসন চার্লস, স্যামুয়েল বদ্রি, থিসারা পেরেরা, কুশল পেরেরা, স্যাম হাইন, সামিউল্লাহ শেনোয়ারি, জহির খান।