বাংলাদেশে ভারতীয় সংবাদ ওয়েবসাইট ব্লক

প্রকাশিত: ১০:১১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৪, ২০১৭

বাংলাদেশে ভারতীয় সংবাদ ওয়েবসাইট ব্লক

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসি বলছে ভারতের একটি সংবাদ ওয়েবসাইট ‘দ্য ওয়্যার’ যাতে বাংলাদেশের ভেতরে দেখা না যায়, সেজন্য তারা সেটিকে ব্লক করে দিয়েছে । খবর বিবিসির

দ্য ওয়্যার একটি সংবাদ-ভিত্তিক ভারতীয় ওয়েবসাইট।

সম্প্রতি এই ওয়েবসাইট বাংলাদেশের নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিখোঁজ শিক্ষক মোবাশ্বার হাসানকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা বা ডিজিএফআই মোবাশ্বার হাসানকে তুলে নিয়ে গেছে।

ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান এবং জঙ্গী তৎপরতা নিয়ে গবেষক সুইডেন প্রবাসী তাসনীম খলিল প্রতিবেদনটি লিখেছেন।

প্রতিবেদনটি প্রকাশের কয়েকদিন পরেই ‘দ্য ওয়্যার’ ওয়েবসাইটটি বাংলাদেশের ভেতরে ব্লক করে দেয়া হয়।
তবে সুনির্দিষ্টভাবে ওই রিপোর্টের কারণেই ওয়েবসাইটটি বাংলাদেশে বন্ধ করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কর্মকর্তারা কিছু বলেন নি।

তবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন কমিশন বা বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেছেন আইনশৃঙ্খলাকারী বাহিনীর দিকে থেকে আপত্তির কারণে এ ওয়েবসাইটটি বাংলাদেশের ভেতরে ব্লক করে দেয়া হয়েছে ।

মাহমুদ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলাকারী বাহিনীর থেকে আমাদের জানানো হয়েছে যে এই ওয়েবসাইটটিতে আপত্তিকর বিষয় রয়েছে। সেজন্য আমরা সব আইএসপিকে নির্দেশ দিয়েছি যাতে এটি বাংলাদেশে দেখা না যায়।’

তবে ওয়েবসাইটটি এখনও বাংলাদেশের ভেতরে থেকে কেউ কেউ দেখতে পাচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে।
মোবাশ্বার হাসান ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন সপ্তাহ দুয়েক আগে। এখনও তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।

নর্থ-সাউথের নিখোঁজ শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে?
বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মোবাশ্বার হাসানকে গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

মোবাশ্বার হাসান তার পরিচিতজনদের কাছে সিজার নামে পরিচিত। গত এক বছর যাবত বেসরকারি নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিটিক্যাল সায়েন্স এন্ড সোশিওলজি ডিপার্টমেন্টে শিক্ষকতা করছিলেন মোবাশ্বার হাসান।

২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে তিনি স্নাতকোত্তর পাশ করেন। সে সময় তিনি বছর খানেক ঢাকায় সাংবাদিকতা করেছেন। এরপর তিনি ব্রিটেনের ডান্ডি ইউনির্ভাসিটি থেকে রাজনীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। কয়েক বছর ব্রিটেনে অবস্থানের পর হাসান ঢাকায় ফিরে আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফামে যোগদান করেন।

বছর দেড়েক সেখানে কাজ করার পর অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান এবং সেখানে গ্রিফিথ ইউনির্ভাসিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামের প্রভাব কতটা ভূমিকা রাখছে সেটি ছিল তার পিএইচডি থিসিসের বিষয়বস্তু। অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে হাসান ঢাকার বেসরকারি ইউল্যাব ইউনিভার্সিটিতে মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষকতা করেন। প্রায় দুই বছর সেখানে কাজ করার পর তিনি নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।

ইসলাম, রাজনীতি এবং জঙ্গিবাদ বিষয়ে সম্প্রতি তিনি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং জার্নালে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লি-ভিত্তিক একটি জার্নালে তার প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। বিশ্বায়নের ছায়ায় বাংলাদেশের ভেতরে কিভাবে রাজনৈতিক ইসলাম এবং উগ্রবাদী সহিংসতা ছড়াচ্ছে সে বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন তিনি সর্বশেষ লেখায়।

সাম্প্রতিক সময়ে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন মোবাশ্বার হাসান। সেজন্য বাসার সামনে ক্লোস সার্কিট ক্যামেরাও স্থাপন করেছিলেন তিনি।

কিছুদিন আগে তার বাসায় একজন অপরিচিত ব্যক্তি এসে তার খোঁজ করেছিলেন বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। মোবাশ্বার হাসানের ফেসবুক পাতায় ৩১শে অক্টোবরের এক পোস্টে দেখা যাচ্ছে তিনি লিখেছেন এক-দুই বছর ধরে তিনি বেনামী ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে বিরক্তিকর বার্তা পেয়ে আসছেন।

মোবাশ্বার হাসান এমন এক সময়ে নিখোঁজ হলেন যখন বাংলাদেশে নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। এদের মধ্যে রাজনৈতিক কর্মী, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছে। এদের কেউ ফিরে এসেছেন এবং অনেকের কোন খোঁজ মেলেনি।

কয়েকমাস আগে লেখক ফরহাদ মাযহার ভোরে নিখোঁজ হয়ে যাবার পর রাতে তার সন্ধান মেলে।

মোবাশ্বার হাসান নিখোঁজ হবার পর খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তার বাবা মোতাহার হোসেন। খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন তার বাবা পুলিশকে জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল সাতটায় মি. হাসান তার কর্মস্থল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে যান।

সেখানে ক্লাস শেষ করার পর দুপুরে আইডিবি ভবনে একটা মিটিং ছিল বলে জানা গেছে। হাসানের বাবা পুলিশকে জানিয়েছেন মঙ্গলবার দুপুর তিনটায় একবার এবং ৪টায় আরেকবার ফোন করেন তিনি।

এরপর থেকেই তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তার বাবা মোতাহার হোসেন বলেন, তারা নিজেরাও ধারণা করতে পারছেন না বিষয়টা কী হচ্ছে। এর বেশি কিছু তিনি বলেন নি।

পুলিশ বলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তদন্ত করা হচ্ছে।