ক্ষমতাসীনদের লুট-পাটের সুযোগ দিতেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে : রিজভী

প্রকাশিত: ৭:১৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৩, ২০১৭

ক্ষমতাসীনদের লুট-পাটের সুযোগ দিতেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে : রিজভী

‘বিদ্যুতের দাম বাড়ানো অযৌক্তিক ও গণবিরোধী, ক্ষমতাসীনদের লুট-পাটে আরো বেশি করে সুযোগ তৈরি করে দিতেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।’ বলে মন্তব্য করেছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী।

রুহুল কবির রিজভী আরো বলেন, ‘বিশ্ববাজারে তেলেন দাম কমলেও জনগণের রক্ত চুষে খেতে আবারও বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম যা আগামী মাস থেকেই কার্যকর হবে। যেখানে বিদ্যুতের দাম কমানোর কথা, সেখানে পূর্বের তুলনায় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসায় এখন বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে বাড়বে ৩৫ পয়সা।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ব্যাংক, বীমা, শেয়ারবাজারসহ সমস্ত অর্থনৈতিক খাতকে তিলে তিলে খেয়ে তাদের (সরকার) স্বাদ মেটেনি। তাই বারবার গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে গরিবের রক্ত পান করাটাই যেন তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য।’

‘এর আগে গত মার্চে সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এর আগে ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় বছরে পাইকারি পর্যায়ে ছয়বার এবং খুচরা পর্যায়ে সাতবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। শুধুমাত্র লুটপাটের জন্যই গরিবের সর্বশেষ সম্বলটুকু আত্মসাৎ করে সরকার আবার বিদ্যুতের দাম বাড়াল।’

রিজভী বলেন, ‘বিদ্যুতের সঙ্গে সব কিছু সম্পর্কিত। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সবচেয়ে বিপাকে পড়বে সীমিত আয়ের মানুষ। শিল্প খাতেও পড়বে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রভাব। এমনিতে সরকারের লুটপাট আর ভয়াবহ দুঃশাসনে দেশে কোনো বিনিয়োগ নেই। এমন সময় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা মানেই বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করা। এতে গোটা অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে।’

‘প্রতিযোগী মূল্যে শিল্প উৎপাদন সক্ষমতা ব্যাহত হবে। এ ছাড়া বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পগুলো, রফতানি সক্ষমতা, শিল্প বহুমুখীকরণ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।’

‘অর্থাৎ ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে। দেশে জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাবে বেকারত্ব্। এমনিতেই এশিয়ার সবচেয়ে বেশি বেকারত্বের হারের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। একই সঙ্গে শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেলে বাড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যও। বর্তমানে নিত্যপণ্যসহ সব কিছুর দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। তার ওপর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির মাশুলও দিতে হবে নিম্ন আয়ের মানুষদের। কৃষি খাতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে। এমনকি কয়েক দফা বন্যায় দেশে তীব্র খাদ্য সংকট চলছে তার ওপর বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়বে। নতুন করে বিদ্যুতের এই দাম বৃদ্ধিতে কৃষি ও শিল্প খাত ধ্বংস হয়ে যাবে।’

রিজভী বলেন, ‘বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ হচ্ছে কুইক রেন্টাল প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন। এসব প্রকল্পের পেছনে জড়িত ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতাদের আত্মীয়স্বজন। এদের লুটপাটের আরো বেশি সুযোগ করে দিতেই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানি এখন লুটের খাত।’

আওয়ামী লীগের শেষ রক্ষা হবে না: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। কোনো ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগের শেষ রক্ষা হবে না

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির অভিযোগ করে বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে যে হামলা চালিয়েছে সেটি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়েই যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল সে বিষয়ে আর কোন সন্দেহ নেই।’

তিনি বলেন, ‘চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বর্তমান ভোটারবিহীন বাকশালী স্বৈরশাসকদের হটাতে গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। তাই যতই ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগ করুক না কেন তাদের শেষ রক্ষা হবে না। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অচিরেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে।’

তিনি বলেন, ‘সত্যকে ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা কখনোই সফল হয় না। ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে হাটে হাড়ি ভেঙে দিয়েছেন। তারা বলেছেন সম্প্রতি কক্সবাজার যাওয়ার পথে ফেনীতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে যে হামলা হয় তার নেপথ্যে ছিল ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। অথচ মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে।’

রিজভী বলেন, ‘সম্প্রতি গণমাধ্যম ও মানুষের বাকস্বাধীনতাকে সম্পূর্ণ রুপে হরণ করতে সম্প্রচার আইন করতে যাচ্ছে সরকার। মূলত এই আইনের শিরোনামকে যতই ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরা হোক না কেন এটি যে বিরোধী দল বহুমত বিশ্বাস স্বাধীন চিন্তার উপর কুঠারাঘাত করার জন্যই এই আইন পাশ করার তোর-জোর শুরু করেছে সরকার যাতে সরকারের বিরুদ্ধে কোন সমালোচনা বিরোধীতা ও বিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচিকে বেপরোয়াভাবে দমন করার জন্যই এই আইন করা হচ্ছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই ভোটারবিহীন সরকারের আমলে তাদের সৃষ্ট নানা গণবিরোধী আইনের মধ্যে এটি হবে আরেকটি ভয়াবহতম কালো আইন। বাংলাদেশের মানুষ এমন কালো আইন মেনে নিবে না। আমি বিএনপি’র পক্ষ থেকে সরকারের এহেন সম্প্রচার আইন-২০১৭ পার্লামেন্টে পাশ করার উদ্যোগের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আজিজুল বারী হেলাল, এম এ মালেক, কাজী আবুল বাশার প্রমুখ।