রোহিঙ্গাদের রক্ষায় বিশ্বনেতাদের স্ত্রীকে এরদোগানপত্নীর হৃদয়বিদারক চিঠি

প্রকাশিত: ২:০৭ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৭

রোহিঙ্গাদের রক্ষায় বিশ্বনেতাদের স্ত্রীকে এরদোগানপত্নীর হৃদয়বিদারক চিঠি

আনকারা: মায়ানমার সেনাদের নির্যাতনের মুখে রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদেরা অবস্থা কদিন আগে নিজের চোখে দেখে গিয়েছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের স্ত্রী এমিনে। তাই এবার সেই বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে বিশ্বনেতাদের স্ত্রীদের কাছে চিঠি লিখেছেন তিনি।

শনিবার পাঠানো সেই চিঠিতে মায়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নেমে আসা ট্র্যাজেডির দিকে দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। খবর আনাদুরু এজেন্সির।

চিঠিতে তুরস্কের ফার্স্ট লেডি বলেন, ‘আমি আশা করি নেতাদের স্ত্রী হিসেবে মানবিক প্রচেষ্টা চালানোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারি। একজন মা হিসেবে, একজন নারী হিসেবে এবং একজন মানুষ হিসেবে আমি মনে করি, আমাদের এমন একটি বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে যেখানে সকলে মানবিকভাবে বসবাস করতে পারবে, কোনো ধরনের জাতিগত ও ধর্মীয় ভেদাভেদ ছাড়া।’

রাখাইন রাজ্যে গত ২৫ আগস্ট অন্তত ৩০টি পুলিশ চৌকি ও একটি সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা’র যোদ্ধারা প্রবেশের চেষ্টা করে। এরপর থেকে মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রাখাইনে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ অভিযানের নামে নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ ও ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে চার হাজারের অধিক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। আর নির্যাতনের মুখে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের ওপর ‘জাতিগত গণহত্যা’ চালানো হচ্ছে উল্লেখ করে রাখাইনের সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু, মায়ানমার সরকার এসব নাকচ করে রাখাইনের মুসলিম বিতাড়নের অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্দশা নিজ চোখে দেখতে গত ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনে এরদোগান। এরপর তিনি ছুটে যান কক্সবাজার জেলার বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সেখানে শরণার্থীদের কষ্টগাঁথা শোনার পাশাপাশি এমিনে এরদোগান তাদের মাঝে মানবিক সাহায্য বিতরণ করেন।

কক্সবাজার সফরের কথা স্মরণ করে তিনি চিঠিতে লেখেন, ‘এক মহিলার কথা শুনছিলাম, যার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, স্বামী এবং সন্তানদের তার চোখের সামনে হত্যা করা হয়েছে। তার কথা আমাকে গভীরভাবে পীড়া দিচ্ছে।’

তুরস্কের ফার্স্ট লেডি আরো লেখেন, ‘ক্যাম্পগুলোতে অসহায় শরণার্থীদের করুণ দৃষ্টির কথা, আকুতির কথা আমি কখনো ভুলতে পারব না।’

প্রাথমিক পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের জন্য এক হাজার টন সাহায্য নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন তুরস্ক ফাস্ট লেডি এমিনে এরদোগান। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পরিদর্শনকালে তাদের দুরবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গিয়েছিল তুরস্কের ফার্স্ট লেডিকে।

বিশ্বনেতাদের স্ত্রীদের উদ্দেশে এমিনে এরদোগান বলেন, মায়ানমারে চলা মানবিক ট্যাজেডির দিকে এখনো আন্তর্জাতিকভাবে জনমত তৈরি হয়নি। এজন্যই রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধ এবং লাখ লাখ শরণার্থীদের দুরবস্থা লাঘবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সুদৃষ্টি নিয়ে আসার জন্যই মূলত তিনি এই চিঠি লিখেছেন।