অবিলম্বে আমিনুরকে জনসমক্ষে হাজির করুন : খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: ৩:১৯ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৩১, ২০১৭

অবিলম্বে আমিনুরকে জনসমক্ষে হাজির করুন : খালেদা জিয়া

তিন দিন ধরে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব নিখোঁজ

দেশে এখন আদিম হিংস্রতা বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আতঙ্ক ও ভয়ে পরিব্যাপ্ত রাষ্ট্র সমাজ। দেশে মনে হয় ঊনবিংশ শতাব্দির ঠগিদের আধিপত্য বিস্তার লাভ করেছে। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই দেশকে গুম, খুন, অপহরণ, গুপ্তহত্যার লীলাভূমিতে পরিণত করেছে বর্তমান গণবিরোধী সরকার। অন্ধ, বন্ধ্যা দুঃশাসনের অচলায়তনে দেশকে বন্দি করে রেখেছে তারা। এরা বছরের পর বছর ধরে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীকে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকারে পরিণত করে গুমের হিড়িক বজায় রেখেছে। অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করতেই এরা দেশকে বিরোধী দলশূন্য করার মহাযজ্ঞে মেতে উঠেছে। সারাদেশে লুটপাটের কর্মসূচি শেষ না করা পর্যন্ত ক্ষমতাসীনরা গুম-খুনের নারকীয় উল্লাসে মেতে থাকবে। বাংলাদেশে চলছে এখন অন্তহীন শোক মিছিল। গত ২৭ আগস্ট রাতে নয়াপল্টন এলাকা থেকে সাভারস্থ আমিনবাজারের নিজ বাসভবনে যাওয়ার পথে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। : বেগম খালেদা জিয়া বলেন, জনসমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ছাত্র, যুবক, চাকরিজীবী, রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অসংখ্য মানুষ। এরা কোথায় অদৃশ্য হচ্ছে কেউ জানে না। জনপদে জনপদে শঙ্কিত মানুষ যেকোনো মুহূর্তে প্রিয়জন হারানোর দুঃসংবাদ পেতে উৎকন্ঠিত হয়ে আছে। অসংখ্য গুমের ঘটনার ধারাবাহিকতায় যুক্ত হলো ২০ দলীয় জোটের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান। দলীয় কার্যালয় থেকে বেরিয়ে তার আর বাড়ি ফেরা হলো না। ওঁৎ পেতে থাকা গুপ্তবাহিনী তাকে কোথায় উঠিয়ে নিয়ে গেছে তা কেউ জানে না। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, রাষ্ট্রক্ষমতা জবরদখলকারীরাই কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমানকে গুম করেছে। : তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অমানবিক ঘটনা দেশে-বিদেশে এখন সর্বত্র জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। দেশ- বিদেশের মানবাধিকার কর্মীরা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্রটি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরছেন। অথচ এসব অভিযোগকে থোড়াই কেয়ার করছে সরকার। অত্যাচারী সরকার দুঃশাসনের অভিঘাত সৃষ্টি করে একটা একদলীয় সামাজিক, রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর এই কারণেই তারা রাষ্ট্রের স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে আক্রমণ করে যাচ্ছে। এই আক্রমণে নির্বাচন এবং জনগণের ভোটাধিকারকে হরণ করে গণতন্ত্রের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল, এখন মৃত্যু নিশ্চিত করা হচ্ছে। : তিনি আরো বলেন, গত সাত দিনে বিএনপি নেতা সৈয়দ সাদাত হোসেন, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী এবং সবশেষে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব গুম হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের নাগরিকদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এসব গুমের ঘটনায় সারা জাতি এখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। অতি সম্প্রতি সরকারের বেপরোয়া শক্তি প্রদর্শনের প্রচেষ্টায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় যে বিব্রতকর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে সেটিকে আড়াল করতেই এই গুমের ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছে। অজানা আশঙ্কায় বেপরোয়া সরকার। : সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমানকে গুম করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি এবং তাকেসহ গুম হওয়া ব্যক্তিদের অবিলম্বে জনসম্মুখে হাজির করার আহবান জানাচ্ছি। এসব গুমের ঘটনা সরকারের অজ্ঞাতসারে ঘটেনি। সরকারকেই গুম হওয়া ব্যক্তিদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। : অপর এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমানকে গুমের ঘটনায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। স্বাধীন দেশে নাগরিকরা হারিয়ে যাবে, এ জন্য লাখো প্রাণের বিনিময়ে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। যারা জনগণের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে তোড়জোড় করে তারাই গুম-খুন-অপহরণের কর্মসূচিকে রাষ্ট্রনীতি হিসেবে গ্রহণ করে। : তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠাতে সরকার রক্তাক্ত সহিংসতার পথ অবলম্বন করেছে। রক্তাক্ত ছোবলে দেশের ছিন্নভিন্ন অবস্থা। স্বস্তি, শান্তি, নিরাপত্তার পরিবর্তে দেশে এখন হুমকি, সন্ত্রাস, শঙ্কা ও ভয়ের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। অশান্তির ছোবলে সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে সরকার ক্ষমতাকে মজবুত রাখতে চায়। কিন্তু সহিংস অনাচার সৃষ্টি করে কখনোই জনগণের মন জয় করা যায় না। : বিএনপি মহাসচিব বলেন, গুম, অপহরণের ভীতি সৃষ্টি করে এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অদৃশ্য করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকে সহনীয় করার প্রচেষ্টা কখনোই সফল হবে না। এভাবে ক্ষমতার মসনদ নিরাপদ হবে না। স্বেচ্ছাচার ও দুর্নীতির চাপে জনগণের শক্তিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। হিংসাপরায়ণ রাজনীতি পরিহার করার মধ্যেই কেবলমাত্র দেশে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ নিশ্চিত হবে। আমি অবিলম্বে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিবকে জনসম্মুখে হাজির করার জোর দাবি জানাচ্ছি।