সত্য গোপন করে সিদ্ধান্তগুলো হাসিল করা হয়েছে : প্রধান বিচারপতি

প্রকাশিত: ৫:৪৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৫, ২০১৭

সত্য গোপন করে সিদ্ধান্তগুলো হাসিল করা হয়েছে : প্রধান বিচারপতি

কিছুদিন আগে সরকার বিচারবিভাগ সংক্রান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে জানিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘সম্পূর্ণ ভুল তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে সরকারপ্রধানের কাছে সত্য গোপন করে সিদ্ধান্তগুলো হাসিল করা হয়েছে।’

শনিবার রাজধানীর কাকরাইলের বিচারপতিদের আবাসিক ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেয়ার আগে বিচার বিভাগের অভিভাবক হিসেবে প্রধান বিচারপতিকে কোনো ইস্যুই অবহিত করা হয়নি। এ রকম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করা হলে ভুল বোঝাবুঝি হতো না।’

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আশা করি বিচার বিভাগকে আপনি আপন করে দেখবেন। বিচার বিভাগকে ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ নেয়ার পরও তা থেমে গেছে। এই বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

দীর্ঘ বক্তব্যে বিচারক স্বল্পতা, অবকাঠামোগত সমস্যা, শিক্ষণ-প্রশিক্ষণের অভাব, আধুনির প্রযুক্তির ব্যবহার কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে না যাওয়া এবং সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করতে একটি মহলের অপচেষ্টার বিষয়টি তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘একটি মহল সবসময় সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে। এ রকম ভুল বোঝাবুঝির কারণে দেশের সাধারণ জনগণের কাছে ভুল বার্তা চলে যায়।’

স্বাধীনতা পরবর্তী যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন বিচার বিভাগ সবচেয়ে সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা, জেলা হত্যা মামলাসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত মামলা, সন্ত্রাস, বিরূপ পরিবেশ রক্ষা, প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা নিরসনসহ সব গুরুত্বপূণ ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ যে ভূমিকা রেখেছে যা রাষ্ট্রের অন্য কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান পালন করেনি। ফলে বিচার বিভাগের মাঝে রাষ্ট্রের অন্য অঙ্গের ভুল বোঝাবুঝির কোনো সুযোগ নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করবো স্বাধীনতার স্বপক্ষের এই সরকার দেশের আইনের শাসনকে সুসম্মত করতে দেশের বিচার বিভাককে আরও শক্তিশালী ও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে সব সময় সহযোগিতা করবে।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচার বিভাগের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মামলাজট। জনসংখ্যার অনুপাতে বাংলাদেশে বিচারকের সংখ্যা অত্যন্ত নগন্য। ভারতে ১০ লক্ষ মানুষের জন্য ১৮ জন বিচারক রয়েছে, অথচ বাংলাদেশে মাত্র ১০ জন। তদুপরি এই অল্পসংখ্যক বিচারকের জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুযোগ নাই।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আপিল বিভাগে সাত জন এবং হাইকোর্ট বিভাগে ৮৫ জন বিচারক রয়েছেন। বেঞ্চ গঠনের সময় আমাকে হিমশিম খেবে হয়। ২০১৭ সালে সাতজন বিচারক অবসরগ্রহণ করবেন। ফলে বেঞ্চ গঠনের জটিলতা আরও প্রকট হবে।’

দেশের সব আদালতে মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা ২০১৩ ও ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ ও ২০১৬ সালে তিন লাখেরও বেশি বেড়েছে বলেও জানান প্রধান বিচারপতি। কিন্তু এ জন্য উদ্যোগ নিয়েও সফল হওয়া যায়নি।

প্রধান বিচারপতি জানান, সারাদেশে মামলা সংখ্যা বিবেচনায় আমরা ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারকের পদ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বিষয়টি জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার আন্তরিক নির্দেশনায় বিষয়টি দ্রুত অনুমোদন হবে।

বিচার প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার হওয়ায় সিলেটে মামলা নিষ্পত্তির হার তিন গুণ বেড়েছে বলেও জানান প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘এ কারণে আমরা বিচার বিভাগে ই জুডিশিয়ারি প্রকল্প হাতে নিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে প্রকল্পটি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনার হস্তক্ষেপে এই বাধা দূরীভূত হবে এবং দেশে বিচারপ্রার্থী জনগণের কাছে আমার এর সুফল পৌঁছাতে সক্ষম হব।’

পূর্ণাঙ্গ ও আধুনিক ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি স্থাপনে কমপক্ষে ২৫ একর জমি বরাদ্দ করতে সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে জানিয়ে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেন প্রধান বিচারপতি।